তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রত্যাশা

স্বৈরাচারীর তৈরি কাচের ঘরে আর বন্দি থাকবে না শিল্পী সমাজ

প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫৭ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন ডেস্ক

সাংস্কৃতিক রাজনীতির মাধ্যমে শিল্পী সমাজ আর স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের তৈরি করা কাচের ঘরে বন্দি থাকবে না বলে আশা ব্যক্ত করেছেন তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতারা। এ সময় তারা একটি স্বাধীন ফিল্ম কমিশন গঠনের দাবি জানান।

তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতারা বলেন, আমরা স্বাধীনভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাই, যেখানে সাধারণ মানুষের কথা উঠে আসবে।

শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে এই সময়োচিত উন্মুক্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন।

এতে বিষয়ভিত্তিক আলোচনার সূত্রধরের ভূমিকা পালন করেন চলচ্চিত্র নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন। একে একে নয় জন তরুণ নির্মাতা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। তারা তাদের পূর্বসূরিদের অনেকের অপরাজনীতির কথা  উল্লেখ করে তাদের আত্মসমালোচনা করেন। শেষে দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর পর্ব চলে।

চলচ্চিত্র নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছিল, একটি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের, আরেকটি ইসলাম ধর্মের ভিত্তিতে। আর গত ১৫ বছরে কালচারাল পলিটিক্সের সম্মুখ ভাগে ছিল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। ৭১’এর চেতনা বনাম মৌলবাদ। শিল্পী সমাজ কাঁচের ঘরে বন্দি ছিলেন। তারা একটা ফ্রাংকেনস্টাইন স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের সৃষ্টি করেছিলেন। তার দায়ভার কি শিল্পী সমাজের ওপর বর্তায় না?

তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে গত এক দশকে একটিও সিনেমা তৈরি হয়নি যা মানুষের কথা বলে, সমাজের কথা বলে। জাতি হিসেবে আমরা একটা ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। আজকের কালচারাল পলিটিক্সের ওপর নির্ভর করেই তৈরি হবে আগামীর কালচার।

সুমন রহমান বলেন, গত ১৫ বছর আমরা চোরাগুপ্তাভাবে ছিলাম। চলচ্চিত্র শিল্পটা ফ্যাসিজমের কাছে হারিয়ে গিয়েছিল। একটা শ্রেণি তাদের দাসত্বের দায় মিটিয়েছেন ফ্যাসিবাদকে সহযোগিতা করে। আর ২০২৪ সালে এসে আমরা যারা গণঅভ্যুত্থানে ছিলাম, আমরা আমাদের রাজনৈতিক দায় পরিশোধ করেছি।

‘মুজিব’ সিনেমার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, মুজিব পরিবারের হত্যাকাণ্ডের সময় স্কুলের ছেলে-মেয়েরা হাততালি দেয়, তখন বোঝা যায় কতটা কালচারাল পলিটিক্স ও দাসত্ব তারা করেছেন। যারা এই অঢেল বাজেটের সিনেমা বানিয়েছেন, তাদের পতন হয়েছে।

তিনি সরকারের কাছে ‘আয়নাঘর’ নামে সিনেমা বানানোর জোর দাবি জানান।

অং রাখাইন বলেন, সমাজ পরিবর্তনের অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে চলচ্চিত্র। রাষ্ট্রের সিস্টেম নিয়ে আমাদের ক্ষোভ আছে। আমি এখনও আশাবাদী না।

তাসমিয়াহ আফরিন মৌ বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকার ফিল্মের প্রতিটি জায়গায়, ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুকে চাপিয়ে দিয়েছে। আর ১১ বিজ্ঞাপন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফিল্মমেকার হিসেবে কাজ করেছে, যা একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট হিসেবে গড়ে উঠেছিল। আওয়ামী লীগ শাসনামলে তাদের বয়ানের বাইরে ভালো কাজ করার কোনো সুযোগ ছিল না। সিনেমা নির্মাতাদের একটি অংশ ওটিটি মাধ্যমে চলে গিয়েছিল। গুমের মতো ঘটনাকে তারা হাসির পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। স্বৈরাচার সরকার কালচারাল পলিটিক্সকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে যে, সিন্ডিকেটের বাইরে কিছু করা যায়নি।

সাজেদুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে ভালো সিনেমা তৈরির সুযোগ দেওয়া হয়নি। সে সময় মেধার কোনো মূল্যায়ন ছিল না। কালচারাল পলিটিক্সের নামে ধর্মের সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি করা হয়েছিল। আমরা এখন স্বাধীন ফিল্ম কমিশন চাই। সব ধরনের সিনেমা তৈরির মুক্ত পথ চাই। মুক্তভাবে সিনেমা তৈরির পরিবেশ চাই।

লাবনী আশরফি আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সমালোচনা করে বলেন, তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু তার নির্মিত সিনেমার একটি অংশে সাজগোজ দেখবেন না বলে, সিনেমার ওই অংশটি কেটে ফেলতে বলা হয়। যা ছিল খুবই দুঃখজনক।

মোহাম্মদ তাওকীর ইসলাম বলেন, ‘রাষ্ট্র সব সময় তার নিজের চেহারা দেখতে ভয় পায় কেন? আমাদেরকে স্বাধীনভাবে সিনেমা বানাতে দিতে হবে। আমরা আর চোর-পুলিশ খেলা দেখতে চাই না।

জাহিন ফারুক আমিন বলেন, কালচারাল পলিটিক্সের মাধ্যমে সেক্যুলার বনাম মুসলিম দ্বন্দ্ব বাঁধিয়ে রেখেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। শেখ হাসিনার মতো ফ্যাসিজমকে আমরা রক্ত দিয়ে বিদায় করেছি। এখন স্বাধীনভাবে সাধারণ মানুষের অভিপ্রায় সিনেমার মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে।

নূরুল আমিন আতিক বলেন, সিনেমায় সাধারণকে ঠেলে অসাধারণকে তুলে ধরা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর শতবর্ষ, স্বাধীনতার ৫০ বছর, মুক্তিযুদ্ধ আর উন্নয়নের গীত গাইতে গাইতে জনগণকে শত্রুতে পরিণত করেছিল আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার। ২৪-এ এসেও আমাদের সন্তানদের প্রাণ কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিলো তারা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আ-আল মামুন বলেন, ২৪-এর আন্দোলনে সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে। অথচ গত ১৫ বছরেও ফ্যাসিস্ট সরকার মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেখতে পেল না। ছাত্র-জনতার এতো এতো লাশ তারা চোখে দেখলো না।


আমার বার্তা/জেএইচ