মাউশিতে রমরমা বদলি বাণিজ্য
প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৫, ১৮:৩২ | অনলাইন সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:

- ডিডি শাহজাহানের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ
- বহাল তবিয়তে 'কোটিপতি পিএ' ওমর ফারুক
৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিভিন্ন সেক্টরে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগলেও 'শিক্ষা খাতের ডেভিল' এখনো বহাল তবিয়তে। পূর্বের মত এই সেক্টরের বদলি-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য চলছেই। দায়িত্বশীল পদে নতুনদের বসানো হলেও কর্মকাণ্ড চলছে পুরানো স্টাইলে। এ নিয়ে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষোভের অন্ত নেই। সরকারি স্কুল-কলেজ এবং জেলা-উপজেলা ভিত্তিক শিক্ষা কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী বদলিতে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ ও বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এই বদলি কার্যক্রমের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে আছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের সাধারণ প্রশাসন উইংয়ের মহাপরিচালক, পরিচালক, উপ-পরিচালক এবং সহকারী পরিচালক। তবে, অবিযোগ আছে মধ্যমকর্তা হিসেবে পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেন উপ-পরিচালক (ডিডি) মো. শাহজাহান। আর এসব বদলি বাণিজ্যসহ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের মূল সহায়তাকারী হিসেবে কাজ করছেন তার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) মো. ওর ফারুক। এ সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ এবং বেশ কিছু তথ্য-প্রমাণ দৈনিক আমার বার্তার হাতে এসেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, পিএ ওমর ফারুক বহু বছর ধরে একই চেয়ারে আছেন। মাউশিতে সবাই তাকে 'কোটিপতি পিএ' হিসেবে চেনে।
লিখিত অভিযোগ এবং সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিতর্কিত সাবেক যুগ্ম সচিব নুরুজ্জামানের মাধ্যমে মাউশির উপ-পরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) পদে আসেন মো. শাহজাহান। আসার পর থেকেই তিনি নিজেকে নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা হিসেবে জাহির করতে ন্যায়-নীতির বাণী প্রচার করেন। তবে, কিছু দিন যেতে না যেতেই নানা কারণে বিতর্কিত কর্মচারীদের অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সুবিধাজনক জায়গায় বদলির ব্যবস্থা করেন। এভাবে নিজস্ব সিন্ডিকেট গড়ে তুলে গত রমজানের ঈদের আগমুহূর্তে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দেশজুড়ে বদলির হিড়িক ফেলে দেন।
অভিযোগ আছে, প্রতিটি বদলির জন্য উপ-পরিচালকের সিন্ডিকেট ঘুষের টাকা কালেকশন করেছে। কম অথবা বেশি, অর্থ লেনদেন ছাড়া কোনো বদলিই হয়নি। সূত্রের দাবি, দুই ধরনের ঘুস লেনদেন হয়েছে বদলি ঘিরে। প্রথমত, পছন্দের জায়গায় যাওয়ার জন্য ঘুষ দিতে হয়েছে। দ্বিতীয়ত, কিছু লোককে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হয়রানি করতে বদলি করা হয়। পরে তারা বদলি বাতিলের জন্য টাকা দিয়েছে।
সূত্র জানায়, কোটিপতি পিএ হিসেবে পরিচিত ওমর ফারুকের গত ৫ বছরে সাবেক উপ-পরিচালকদের সঙ্গে ঘুষের ফিফটি-ফিফটি বণ্টন হত। তবে, নতুন উপ-পরিচালকের সঙ্গে তার ভাগ হয় শতকরা ৩০/৭০। আর বর্তমানে বিভিন্ন বিএনপি নেতা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তাদের দোহাই দিয়ে এসব বদলিবাণিজ্য হচ্ছে। ফারুকসহ কয়েজন কর্মচারী ঘুষ বাণিজ্যে লিপ্ত থেকে উপ-পরিচালক শাহজাহানকে সর্বাত্মক সহায়তা করছেন, এমন অভিযোগ শিক্ষা ক্যাডার সদস্য ও কর্মচারীদের মুখে মুখে। অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে ওমর ফারুক বলেন, এগুলো মিথ্যা কথা। আমার কাউকে বদলি করার বা সুপারিশ ক্ষমতা নাই।
জানা যায়, প্রায় পাঁচ বছর আগে ফারুক যশোর থেকে শিক্ষা ভবনে বদলি হয়ে আসেন। সরকারি হাই স্কুল ও উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্মচারী বদলি করেই কোটিপতি বনে গেছেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৩ মার্চ মাউশি অধিদপ্তরের এক বদলির আদেশের তালিকার এক নম্বরে থাকা মো. আনোয়ারুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ অনেক আগে থেকেই। তিনি খুলনা ডিডি অফিসে কর্মরত ছিলেন বহু বছর। কোটি টাকাসহ ধরা পড়ার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে তাকে ডিডি অফিসের ৫০০ গজের মধ্যে থাকা খুলনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে লোক দেখানো বদলি করা হয়। কয়েক মাসের ব্যবধানে বিতর্কিত আনোয়ারুলকে স্ব-বেতনে কম্পিউটার অপারেটর পদে ডিডি অফিসে বদলি করা হয়। আনোয়ারুলের মূল পদ উচ্চমান সহকারী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাউশি অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, এমন বদলি নজিরবিহীন। প্রশাসনিক অদক্ষতা ও দুর্নীতির বড় উদাহরণ এটা। এই বদলির আদেশেও ডিডি ও তার পিএ ফারুকের ভালো বাণিজ্য হয়েছে।
মাউশি অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানায়, উপ-পরিচালক শাহজাহান বিভিন্ন অপকর্মের হোতা কর্মচারী নাসির উদ্দিনকে বদলি ও গ্রেপ্তারের উদ্যোগ আটকে রেখেছেন। চাউর আছে, সাড়ে ৭ লাখ টাকার বিনিময়ে নাসিরকে সুবিধা দিচ্ছেন তিনি। যদিও এ বিষয়ে কেউ সরাসরি কথা বলতে রাজি হননি। অভিযোগ আছে, ১৪ গ্রেডের কর্মচারীকে ১৬তম গ্রেডে স্বপদে বদলি করেছেন নজিরবিহীনভাবে। গত কয়েক মাসের বদলি বাণিজ্য নিয়ে উপপরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ কয়েকটি দপ্তরে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী জানান, ঢাকা আঞ্চলিক অফিসের হিসাব রক্ষক নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্তি, অভিযোগ তদন্ত, সরকারি স্কুল শিক্ষকদের বদলিসহ নানা কাজ করার অভিযোগ। গত বছরে ঢাকা অফিসের যাবতীয় বাজেটের টাকা তুলে নিয়েছিল নাসির। কারোরই কিছু করার ছিলো না।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাউশি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শাহজাহান বলেন, কাজ করতে গেলে নানা রকম কথা উঠবে। এসব তথ্য সঠিক নয়। এখানে কর্মচারীদের মধ্যে গ্রুপিং আছে। যাদের স্বার্থ উদ্ধার না হয়, তারাই মিথ্যা তথ্য ছড়ায়।
আমার বার্তা/এমই