চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট নিরসনে এনবিআরের কঠোর নির্দেশনা

প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৫, ১০:২০ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

বহির্নোঙরে জাহাজের অবস্থানকালীন সময় কমাতে ১০টির পরিবর্তে কনটেইনারবাহী ১৩টি জাহাজ ভেড়াতে গিয়ে এবার কনটেইনারের জট বাঁধিয়ে ফেলেছে চট্টগ্রাম বন্দর। বর্তমানে বন্দরের ইয়ার্ডে ৪৮ হাজারের বেশি কনটেইনার জমে আছে, যা সাম্প্রতিক সময়ে সর্বোচ্চ। এ অবস্থায় জট নিরসনে আমদানি করা কনটেইনার বন্দরের ইয়ার্ডে ফেলে না রেখে একদিনের মধ্যেই অফডকে নিয়ে যেতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে ৪৮ হাজার ৭৫১ টিইইউএস কনটেইনারের অবস্থান রয়েছে। অবশ্য ১৭ আগস্ট তা ৪৯ হাজার ১৩১ টিইইউএসে পৌঁছে গিয়েছিল। যা সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কনটেইনারের অবস্থান। ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস ধারণ ক্ষমতার বন্দরে কনটেইনারের এই অবস্থান কিছুটা কম মনে হলেও ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান-লরি এবং ক্রেন চলাচলের সুবিধার্থে ৩০ শতাংশ জায়গা খালি রাখতে হয়। স্বাভাবিক সময়ে বন্দরে ৩৭ থেকে ৩৮ হাজার কনটেইনারের অবস্থান থাকে।
 
এদিকে, প্রধান জেটিতে ১৩টি জাহাজ একসঙ্গে ভেড়ার সুযোগ দেয়ায় এখন জাহাজের অবস্থানকাল কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২ দিনে, যেখানে আগে ১০টি জাহাজ ভেড়ানো যেত এবং সময় লাগত ৪-৫ দিন। তবে এর ফলে কনটেইনারের চাপ বেড়ে নতুন সংকট তৈরি হয়েছে।
 
বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, গত কয়েক মাস ধরে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় কনটেইনারবাহী জাহাজ আসার সংখ্যা বাড়ছিল। কিন্তু বার্থিং সুবিধা সীমিত থাকায় জাহাজগুলোকে দীর্ঘ সময় বহির্নোঙরে অপেক্ষা করতে হতো।
 
তবে সমালোচনার মুখে এখন বার্থিং নেয়া জাহাজের সংখ্যা বাড়ালেও কনটেইনার জট নিয়ে বন্দরকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর জন্য ১০ হাজারের বেশি নিলামযোগ্য কনটেইনার ও ২ হাজার আইসিডিগামী কনটেইনারকে দায়ী করছেন তারা। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, আগে গড়ে ১০টি জাহাজ বার্থিং দেয়া হলেও এখন দেয়া হচ্ছে ১৩টি। ফলে আগের তুলনায় বেশি কনটেইনার জমা হচ্ছে বন্দরে।
 
এদিকে, চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার জট নিয়ন্ত্রণে কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। নির্দেশনা অনুযায়ী, যে দিনেই জাহাজ থেকে কনটেইনার নামবে, বন্দরের ইয়ার্ডে ফেলে না রেখে সেদিনেই অফডকে নিয়ে যেতে হবে। আমদানির প্রথম চারদিন পর্যন্ত বিনা শুল্কে বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনার রাখার বিধান থাকায় এই সুযোগকে কাজে লাগাতেন আমদানিকারকসহ অন্যান্য সংস্থাগুলো। আর তাতেই বন্দরে সৃষ্টি হতো কনটেইনার জট।
 
আরও পড়ুন: তেজস্ক্রিয় পদার্থ সন্দেহে শনাক্ত ১৩ কনটেইনার নিয়ে বেকায়দায় চট্টগ্রাম বন্দর
 
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের জয়েন্ট কমিশনার মোহাম্মদ মারুফুর রহমান জানান, প্রথম ও দ্বিতীয় দিনের মধ্যে অবশ্যই কনটেইনার অফডকে নিয়ে যেতে হবে। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে বা সক্ষমতার ঘাটতি থাকলে কাস্টমস কমিশনার ডুয়েল ডেলিভারির অনুমতি দিতে পারবেন।
 
বর্তমানে ৩০টির বেশি দেশি-বিদেশি শিপিং লাইনের ১২৫ থেকে ১৩০টি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার ও বাল্কপণ্য নিয়ে আসছে। ৬৫ ধরনের আমদানি পণ্য ডেলিভারি এবং তৈরি পোশাক রফতানির জাহাজীকরণ সম্পন্ন হয় ২১টি বেসরকারি অফডকে। এক্ষেত্রে অফডকের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি বন্দর থেকে অফডকের যাত্রাপথের যানজট নিরসন করা না গেলে জটিলতা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। এমএসসি শিপিংয়ের হেড অব অপারেশন আজমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, অফডকগুলোর কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা, লজিস্টিক প্রস্তুতি ও রাস্তাঘাটের অবস্থা সবকিছুই বিবেচনায় নিতে হবে।
 
অন্যদিকে গম, সিমেন্ট ক্লিংকার, কয়লা, স্ক্র্যাপ লোহার মতো পণ্য বহির্নোঙরে খালাস করা সম্ভব হলেও আমদানি ও রফতানির কনটেইনার লোড-আনলোডের জন্য বন্দরের এনসিটি, সিসিটি ও জিসিবি’র বার্থে অবস্থান নিতে হয়।

আমার বার্তা/এল/এমই