শ্রম আইন সংস্কারে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতির প্রত্যাশা

প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১৮:০৩ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

বিজিএমইএ’র সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের সঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধিদের বৈঠক। ছবি সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী বাংলাদেশে শ্রম আইন সংস্কার আইএলও, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক মহলের প্রত্যাশা বলে জানিয়েছেন ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধিরা। তারা এ বিষয়ে স্পষ্টতা ও সহযোগিতা নিশ্চিত করতে বিজিএমইএর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

বুধবার (১৩ আগস্ট) বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সংগঠনটির সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধিরা। এ সময় তারা এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ’র কমপ্লেক্সে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধিদলে ছিলেন- লেবার অ্যাটাশে লীনা খান, ফরেন কমার্শিয়াল সার্ভিস অ্যাটাশে পল জি. ফ্রস্ট, ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিস অ্যাটাশে এরিন কোভার্ট এবং ইকোনমিক অফিসার রিচার্ড রাসমুসেন।

বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশ নেন সিনিয়র সহ-সভাপতি ইনামুল হক খান, সহ-সভাপতি মো. রেজোয়ান সেলিম, সহ-সভাপতি (অর্থ)মিজানুর রহমান, সহ-সভাপতি ভিদিয়া অমৃত খান, পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রহিম, পরিচালক ফয়সাল সামাদ, শেখ হোসেন মোহাম্মদ মোস্তাফিজ।

এ সময় বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, পোশাকখাতে স্থিতিশীল শ্রম পরিস্থিতি বিজিএমইএ’র অন্যতম অগ্রাধিকার এবং তার বোর্ড দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই সুষ্ঠু শিল্প সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য ৮১টি শ্রমিক ফেডারেশনের সঙ্গে সংলাপ করেছে।

তিনি শ্রম অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশের আইনি সংস্কারের অগ্রগতি সম্পর্কেও মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধিদলটিকে অবহিত করেন।

মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা জানান, আন্তর্জাতিক প্রত্যাশা যে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতি রেখে বাংলাদেশে শ্রম আইন সংস্কার করা হবে এবং এটি আইএলও ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সবার চাওয়া।

বিজিএমইএ নেতারা শ্রম সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে যোগাযোগ রক্ষা করার ওপর গুরুত্ব দেন, যাতে করে কোথাও কোন অস্পষ্টতা না থাকে।

বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়, বিশেষ করে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়।

বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রদত্ত শর্ত, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত পোশাকে যদি কমপক্ষে ২০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়, তবে সেই পণ্যের ওপর নতুন আরোপিত অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক থেকে আনুপাতিকভাবে অব্যাহতি পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান এটিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এ সুবিধাকে কাজে লাগাতে একান্তভাবে আগ্রহী।

বিজিএমইএ নেতারা মার্কিন প্রতিনিধিদলের কাছে রপ্তানি পণ্যে কি ফর্মুলায় বা প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কাঁচামাল ব্যবহারের মূল্যায়ন এবং স্বচ্ছতা ও ট্রেসেবিলিটি নির্ণয় করা হবে (তুলা উৎপাদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত পণ্য পর্যন্ত পুরো সরবরাহ চেইন ট্র্যাক করা সম্ভব হবে) জানতে চান এবং এ ব্যাপারে দূতাবাসের সহযোগিতা কামনা করেন।

বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি তরান্বিত করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে একটি ওয়্যারহাউজ প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা নিয়েও আলোচনা করা হয়। বলা হয় যে, এটি বাংলাদেশি উদ্যোগ অথবা মার্কিন উদ্যোগ অথবা যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। এ ওয়্যারহাউজ পোশাক শিল্পে লীড টাইম কমাতে ভূমিকা রাখবে।

বিজিএমইএ নেতারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির পাশাপাশি তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে পলিয়েস্টার, নাইলন এর মতো ম্যান-মেইড ফাইবার (যদি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সটাইল খাত এগুলো করে থাকে),আমদানি করতে আগ্রহী। এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য তারা মার্কিন দূতাবাসের সহযোগিতা কামনা করেন।

পরে ফরেন কমার্শিয়াল সার্ভিস অ্যাটাশে পল জি. ফ্রস্ট বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে তারা এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাবেন।

বৈঠকে ইউএস কটন কাউন্সিলের সঙ্গে বিজিএমইএ এর সম্ভাব্য সহযোগিতা (কোলাবোরেশন) নিয়েও আলোচনা হয়। ফরেন কমার্শিয়াল সার্ভিস অ্যাটাশে পল জি. ফ্রস্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের টেক্সটাইল ডিপার্টমেন্ট এর সঙ্গে আলোচনা করে দূতাবাস এ ব্যাপারে বিজিএমইএ’কে একটি ফিডব্যাক দিবে।

বৈঠকে দেশের গ্যাস ও বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। বিজিএমইএ নেতারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি গ্যাস আমদানি করবে বাংলাদেশ।

ঢাকাস্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি বাড়াতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় উদ্যোগ, সিলেক্ট ইউএসএ’র ২০২৬ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য বিজিএমইএ নেতাদেরকে পরামর্শ দিয়েছেন।

তারা বলেন, এটি বাংলাদেশি পোশাক উদ্যোক্তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসায়িক নেটওয়ার্কিং তৈরিতে উল্লেখযোগ্যভাবে সহায়তা করবে।

বৈঠকে উভয়পক্ষই ভবিষ্যতে দুই দেশের অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।


আমার বার্তা/এমই