তেজস্ক্রিয় পদার্থ সন্দেহে ১৩ কনটেইনার নিয়ে জটিলতায় চট্টগ্রাম বন্দর

প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১০:০৮ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

তেজস্ক্রিয় পদার্থ সন্দেহে শনাক্ত হওয়া লোহার স্ক্র্যাপ এবং শিল্পের কাঁচামাল বোঝাই ১৩টি কনটেইনার নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ। আটকে পড়া এসব কনটেইনার আইনি জটিলতায় রফতানিকারক দেশে ফেরত পাঠানো কিংবা সমন্বয়হীনতায় অপসারণ কিছুই হচ্ছে না। ঝুঁকি বিবেচনায় এসব কনটেইনার ২ সপ্তাহের মধ্যে অপসারণে কাস্টমস হাউজকে চিঠি দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে মেগাপোর্ট ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পের আওতায় বন্দরে স্থাপন করা বিশেষায়িত গেট অতিক্রম করার সময় এসব কনটেইনারে তেজস্ক্রিয় পদার্থ শনাক্ত করা হয়। সবশেষ গত ৩ আগস্ট ব্রাজিল থেকে আসা লোহার স্ক্র্যাপ বোঝাই একটি কনটেইনারে ২.১৬ মাত্রার সি এস-ওয়ান থ্রি সেভেন এবং টি এইচ-টু থ্রি টু তেজস্ক্রিয় পদার্থ ধরা পড়ে।
 
গত পাঁচ বছরে লোহার স্ক্র্যাপ, সিরামিকের কাঁচামাল এবং জিংক ওয়েস্ট বোঝাই ১৩টি কনটেইনারে এ ধরনের তেজস্ক্রিয় পদার্থ শনাক্ত করেছে পরমাণু শক্তি কমিশন। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ড. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টমস ও পরমাণু শক্তি কমিশনের মধ্যে কোনো সমঝোতা চুক্তি না থাকায় এসব পণ্যের তত্ত্বাবধান কে করবে, তা ঠিক করা যাচ্ছে না।’
 
বিগত ২০১৪ সালে প্রথমবার চট্টগ্রাম বন্দরে স্ক্র্যাপ বোঝাই কনটেইনারে তেজস্ক্রিয় পদার্থ শনাক্ত হয়। এরপর থেকে প্রতি বছর ৩-৪টি কনটেইনারে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ধরা পড়লেও, যদি তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা সহনীয় থাকে, তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কেবল ২.৩ মাত্রার বেশি হলে কনটেইনারগুলো আটকে রাখা হয়।
 
চট্টগ্রাম বন্দরে বিভিন্ন সময়ে শনাক্ত হওয়া ১৩টি তেজস্ক্রিয় ধাতব বস্তু আপাতত কনটেইনার ভর্তি অবস্থায় মেগাপোর্ট ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পের একটি পয়েন্টে রাখা হয়েছে। বন্দর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তেজস্ক্রিয় পদার্থগুলো যত দ্রুত সম্ভব অপসারণ করতে পারলে চট্টগ্রাম বন্দর ঝুঁকিমুক্ত হবে।
 
এদিকে, তেজস্ক্রিয় পদার্থ থাকা কনটেইনারের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে এসব কনটেইনার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের কাছে একাধিকবার চিঠি দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানিয়েছেন, এসব কনটেইনার দ্রুত নিষ্পত্তি জরুরি, কারণ সেগুলো থেকে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও দুর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এ ধরনের পণ্য দ্রুত সরিয়ে ফেলতে কাস্টমসকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
 
অন্য পণ্যের সঙ্গে আসা তেজস্ক্রিয় পদার্থ ফেরত পাঠানোর নিয়ম থাকলেও তা ঠিকমতো কার্যকর হচ্ছে না। এছাড়া পরমাণু শক্তি কমিশনের সঙ্গে বন্দর বা কাস্টমসের চুক্তি না থাকায় এসব পদার্থ অপসারণে দীর্ঘসূত্রিতা সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে পরমাণু শক্তি কমিশনের ছাড়পত্র নিয়ে পণ্য বোঝাই এসব কনটেইনার নিলামে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ।
 
প্রতিষ্ঠানটির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ মারুফুর রহমান বলেন, ‘কাস্টমস আইন অনুযায়ী এসব পণ্য দ্রুত নিলামে তোলা হবে। তবে পরমাণু শক্তি কমিশনের ছাড়পত্র ছাড়া কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে না।’
 
শুধু আমদানি পণ্যের সঙ্গে তেজস্ক্রিয় পদার্থ এসেছে এমনটা নয়। জাহাজ কাটা শিল্পের রফতানিযোগ্য পণ্যের মধ্যেও পরমাণু শক্তি কমিশনের পরীক্ষায় তেজস্ক্রিয় পদার্থ ধরা পড়েছে। অন্তত তিন ধাপে পরীক্ষা শেষে এসব পদার্থ ঢাকার সাভারে থাকা তেজস্ক্রিয় পদার্থ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে সংরক্ষণ করা হয়।

আমার বার্তা/এল/এমই