বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি চ্যালেঞ্জের মুখে
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৫, ১৬:১১ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

গত টানা পৌনে দুই বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমছে। কানাডা ও আমেরিকাসহ ইউরোপের প্রধান নয়টি বাজারেও রপ্তানি আয় কমেছে ৮ দশমকি ৭৯ শতাংশ। তবে জাপানসহ অনেক নতুন বাজারে পোশাক রপ্তানি বাড়ায় সার্বিকভাবে এ খাতে রপ্তানি আয় বেড়েছে।
তবে যদি মার্কিন প্রশাসনের অতিরিক্ত আরোপিত শুল্ক কাঠামো অব্যাহত থাকে তাহলে আগামীতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বাড়তে পারে। কারণ পোশাক শিল্পের রপ্তানি বাড়াতে সরকার বিভিন্ন খাতে নীতিসহায়তা দিচ্ছে। তার পরও কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে আগামীতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও বাণিজ্যনীতির পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গত পৌনে দুই বছর ধরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ২০৭ কোটি ডলারের, অক্টোবর ডিসেম্বর প্রান্তিকে তা কমে রপ্তানি দাঁড়ায় ১৯৭ কোটি ডলার, জানুয়ারি মার্চ প্রান্তিকে আবার সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ২১৬ কোটি ডলার, এপিল জুন প্রান্তিকে আবার কমে দাঁড়ায় ১৭৩ কোটি ডলারে।
সদ্য বিদায়ি অর্থবছরের জুলাই সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ১৮৫ কোটি ডলার, অক্টোবর ডিসেম্বর প্রান্তিকে ১৯৯ কোটি ডলার, জানুয়ারি মার্চ প্রান্তিকে ১৯০ কোটি ডলার ও এপ্রিল জুন প্রান্তিকে ১৮১ কোটি ডলার পণ্য দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গড় হিসাবে গত পৌনে দুই বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি কমছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত জানুয়ারি মার্চ প্রান্তিকের তুলনায় গত এপ্রিল মে প্রান্তিকে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির প্রধান নয়টি বাজারে বেড়েছে ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। তবে গত পৌনে দুই বছরের তুলনায় কমেছে ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি আগামীতে বাড়তে পারে। কারণ বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলোতে মার্কিন প্রশাসন কর্তৃক আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক প্রায় সমানই রয়েছে। তবে ভারতের ওপর আরোপিত শুল্কহার এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ আরোপিত রয়েছে।
সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিযোগী দেশগুলো হচ্ছে ভারত, ভিয়েতনাম, শ্রীলংকা, কম্বোডিয়া এসব দেশ। এর মধ্যে ভারতে শুল্ক ৫০ শতাংশ। অন্য দেশগুলোতে ১৯ থেকে ২০ শতাংশ। বাংলাদেশেও ২০ শতাংশ। এ হিসাবে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে প্রায় সমান পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকারের বাড়তি নীতিসহায়তা পাচ্ছে। এখন দরকার স্থিতিশীলতা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধান নয়টি বাজারের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্রে। গত প্রান্তিকে রপ্তানি করেছে ১৮১ কোটি ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে জার্মানি, গত প্রান্তিকে করেছে ১১৫ কোটি ডলার। এর পরে রয়েছে যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালি, কানাডা ও বেলজিয়াম। এদিকে নতুন বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বাড়তে শুরু করেছে। এর মধ্যে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, চীন, আফ্রিকার কয়েকটি দেশ, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও পোশাক রপ্তানি বাড়ছে।
এসব কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, আগামীতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বেশ সম্ভাবনা রয়েছে। এখন প্রয়োজন উদ্যোক্তাদের পণ্য বহুমুখীকরণের দিকে নজর দেওয়া। দক্ষতা বাড়িয়ে পণ্যের উৎপাদন খরচ কমানো। তাহলে প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা আরও বাড়বে।
এ খাতে রপ্তানি বাড়াতে চ্যালেঞ্জ হিসাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেখছে সম্প্রতি ভারত সরকার দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে পোশাক রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করে। এতে ভারতে রপ্তানি কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ এখনো একটি চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারণ এটিকে উদ্যোক্তারা কীভাবে সমন্বয় করবেন সেটিই দেখার বিষয়।
আমার বার্তা/এল/এমই