সুদহার বাড়িয়ে খেলাপি ঋণ ঢাকার চেষ্টা ব্যাংকগুলোর

প্রকাশ : ২১ জুলাই ২০২৫, ১০:১৭ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

খেলাপি ঋণ আদায়ের ব্যর্থতা ঢাকতেই দীর্ঘদিন ধরে সুদের হার বাড়িয়ে রেখেছে ব্যাংকগুলো। যা বাধা হয়ে আছে ব্যবসা সম্প্রসারণের পথে। এমন অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। বিভিন্নভাবে হিডেন চার্জ গ্রাহকের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়াকে জালিয়াতি হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিনিয়োগ বাড়াতে খেলাপি ঋণ আদায়ে দরকার চলমান সংস্কারের দৃশ্যমান অগ্রগতি।

ব্যাংক ঋণে সুদহার নির্ধারণে ছয়-নয় সীমা তুলে দিয়ে ২০২৩ সালে জুলাই থেকে কার্যকর করা হয়েছে সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল বা ট্রেজারি পদ্ধতি। এতে দীর্ঘদিন ঋণের বিপরীতে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
 
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব, গত মার্চে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকায়। তিন মাসে বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। ৬১ ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে মাত্র ১০ ব্যাংকেই হয়েছে ৩ লাখ ২৮ কোটি টাকা। এই লাগামহীন খেলাপির জের টানতেই গ্রাহকের ওপর উচ্চ সুদহার চাপিয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ী নেতাদের।
 
নিট শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ব্যাংকের অডিট ডিপার্টমেন্ট না থাকায় অডিট হয় নি। কিন্তু এর দায় চাপানো হচ্ছে গ্রাহকদের ওপর। নন পারফর্মিং লোনের দায়গুলো সুদহার বাড়িয়ে দিয়ে ভালো গ্রাহকের ওপর চাপানো হচ্ছে। এটি কখনোই কাঙ্ক্ষিত নয়।
 
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, কয়েকটি ব্যাংক হিডেন চার্জের নামে ব্যবসায়ীদের ওপর উচ্চ সুদহার চাপাচ্ছে, যা জালিয়াতির শামিল। এ অবস্থায় গ্রাহকের প্রতিটি কর্মকাণ্ড নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রাখার তাগিদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসাইন খান বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, কিছু ব্যাংক হিডেন চার্জ আরোপ করছে। এটি অযাচিতভাবে ব্যবসায়ীদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। একজন খেলাপির অর্থ আরেকজনের থেকে তুলে নেয়ার সুযোগ নেই। এটি জালিয়াতি।
 
খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকাতেই সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি থেকে বের হতে পারছে না ব্যাংক খাত। এমন যুক্তি তুলে ধরে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে দরকার খেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপের অগ্রগতি। রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যারা নতুন করে ঋণ নিতে চাচ্ছেন, তাদের ওপর অতিরিক্ত সুদের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকায় সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি থেকে বের হতে পারছে না ব্যাংকগুলো।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য, খেলাপি ঋণের বোঝা টানা শীর্ষ ১০ ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালি ব্যাংক। আর বাকি ছয়টি হলো ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক।


আমার বার্তা/এল/এমই