শেয়ার, বন্ড ও ফান্ডে বিনিয়োগে ঝুঁকি মোকাবিলায় নতুন নির্দেশনা জারি

প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৫, ১২:২৮ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

বাংলাদেশে কার্যরত সব ফাইন্যান্স কোম্পানির জন্য শেয়ার, বন্ড, ডিবেঞ্চার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং কমার্শিয়াল পেপারে বিনিয়োগের বিপরীতে নির্ধারিত পরিমাণ সংস্থান সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ লক্ষ্যে একটি সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, বন্ড বা ডিবেঞ্চারের বাজারমূল্য যদি ক্রয়মূল্যের চেয়ে কম হয়, তাহলে এই পার্থক্যকে 'বিনিয়োগজনিত ক্ষতি' হিসেবে ধরে একই পরিমাণ অর্থ সংস্থান হিসেবে রাখতে হবে। প্রতিটি তহবিলের জন্য পৃথকভাবে এই হিসাব রাখতে হবে।

তালিকাভুক্ত নয় এমন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বা বন্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম মানতে হবে। নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীর ভিত্তিতে শেয়ারের নিট সম্পদ মূল্যের চেয়ে যদি বাজারমূল্য কম হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ সংস্থান হিসেবে রাখতে হবে।

যেসব কোম্পানির টানা তিন বছর কোনো মুনাফা হয়নি, নিরীক্ষিত হিসাব নেই, বা অস্তিত্ব নেই, সেখানে বিনিয়োগের সম্পূর্ণ টাকাই সংস্থান হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে। যদি কোনো অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির বন্ড, ডিবেঞ্চার বা নন-কনভার্টিবল প্রেফারেন্স শেয়ারে বিনিয়োগ করা হয় এবং এক বছরের মধ্যে সুদ বা লভ্যাংশ না পাওয়া যায়, তাহলে প্রথম বছর শেষে ২৫%, দ্বিতীয় বছর শেষে ৫০%, তৃতীয় বছর শেষে ১০০% সংস্থান রাখতে হবে। স্বল্পমেয়াদি বন্ড বা ডিবেঞ্চার যদি মেয়াদ শেষে পুরো টাকা ফেরত না দেয়, তাহলে পরের হিসাব বছরে ১০০% সংস্থান সংরক্ষণ করতে হবে। যেসব বিনিয়োগের সুদ ছয় মাস বা তার বেশি সময় অনাদায়ি রয়েছে, সেগুলোকে সন্দেহজনক বা ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করে যথাক্রমে ৫০% ও ১০০% হারে সংস্থান রাখতে হবে। সার্কুলারে বলা হয়েছে, কোনো বিনিয়োগ থেকে নগদে লভ্যাংশ না পাওয়া গেলে তা আয় হিসেবে দেখানো যাবে না।

মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও কমার্শিয়াল পেপারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত ২০১৫ ও ২০২০ সালের পুরোনো নির্দেশনাগুলোও বহাল থাকবে। প্রয়োজনে নতুন সিদ্ধান্তের আলোকে সেগুলো সংশোধন করে মানতে হবে।

ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোকে প্রতি বছরের মার্চ, জুন, সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বর শেষে এই সংস্থান সংক্রান্ত প্রতিবেদন হার্ডকপি ও সফটকপি আকারে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হবে। বার্ষিক আর্থিক বিবরণীতেও এসব তথ্য যথাযথভাবে দেখাতে হবে। 'ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩'-এর ৪১(২)(ঘ) ধারার ক্ষমতাবলে এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, নতুন এই সার্কুলার জারি করার মূল কারণ হলো-ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা এবং গ্রাহকের আমানত সুরক্ষা করা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, শেয়ার, বন্ড, ডিবেঞ্চার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও কমার্শিয়াল পেপারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগে অনেক সময় ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। এসব বিনিয়োগ থেকে প্রকৃত আয় না এলেও কিছু প্রতিষ্ঠান কৃত্রিমভাবে মুনাফা দেখায়, যা আর্থিক প্রতিবেদনে বিকৃত প্রতিচিত্র সৃষ্টি করে।

এ অবস্থায় বিনিয়োগজনিত ক্ষতির বিপরীতে সুনির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সংস্থান রেখে সম্ভাব্য লোকসান মোকাবিলা করার সক্ষমতা গড়ে তোলাই এই সার্কুলারের মূল উদ্দেশ্য। এতে ফাইন্যান্স কোম্পানির প্রকৃত আর্থিক অবস্থা প্রতিফলিত হবে এবং বিনিয়োগকারীর আস্থা বাড়বে।


আমার বার্তা/এল/এমই