বিশ্ববাজারে কমছে ডলারের দাম

প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৫, ১৭:২০ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে চাপে পড়েছে ডলারের দামে। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ইউরোর বিপরীতে মার্কিন ডলারের দর নেমে গেছে প্রায় ৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে সরিয়ে নতুন কাউকে নিয়োগ দেয়ার কথা ভাবছেন। এ ধরনের পরিকল্পনার খবরে বাজারে অনিশ্চয়তা আরও বাড়ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ফেডের ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি করছে। এতে শুধু ফেডের বিশ্বাসযোগ্যতা নয়, ভবিষ্যতের সুদের হার নিয়ে স্পষ্টতা হারাচ্ছে বাজার।

মোনেক্স ইউরোপের ম্যাক্রো গবেষণা প্রধান নিক রিস বলেন, 'এটা শুধু ফেডের স্বাধীনতার প্রশ্নই না, বরং এতে মার্কিন সুদের হারের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়েও বড় রকমের অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। এই কারণেই বৃহস্পতিবার ডলারের ওপর চাপ আরও বেড়েছে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ‘পারস্পরিক শুল্ক’ চুক্তির মেয়াদ ৯ জুলাই শেষ হওয়ার কথা-এটাও নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে।'

এর আগে বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেন। পাওয়েল বলেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতি মুদ্রাস্ফীতিকে দীর্ঘস্থায়ী করতে পারে, তাই সুদের হার কমানোর ক্ষেত্রে ফেডকে আরও সতর্ক হতে হবে। আর ট্রাম্প পাওয়েলকে ‘ভয়ঙ্কর’ বলে আখ্যা দেন। জানান, ফেডের শীর্ষ পদে বসানোর জন্য তার হাতে তিন থেকে চারজন বিকল্প রয়েছে।
 
আরও পড়ুন: কেন ডলারের চেয়ে স্বর্ণকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো?

এসব ঘটনার প্রভাবে বাজার এখন ধরে নিচ্ছে, ফেড জুলাইয়ে সুদের হার কমাতে পারে। এক সপ্তাহ আগে এই সম্ভাবনা ছিল মাত্র ১২ শতাংশ, আর এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ শতাংশে। বছরের শেষ নাগাদ মোট ৬৪ বেসিস পয়েন্ট হারে সুদের হার কমে আসতে পারে বলেও মনে করছে বাজার, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৪৬ পয়েন্ট।

ফলে ইউরো বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.১৭২৯ ডলারে, যা ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের পর সবচেয়ে বেশি। পাউন্ড ০.৬৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১.৩৭৫৩ ডলার, যা ২০২১ সালের অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ। সুইস ফ্রাঙ্কের বিপরীতে ডলারের দর নেমে এসেছে এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন ০.৭৯৮৩ ডলারে। একই সঙ্গে ইয়েনের বিপরীতে ফ্রাঙ্কের দর রাতারাতি পৌঁছেছে ১৮০.৫৫-এ, যা রেকর্ড উচ্চতা।

তবে আগের দিনের কিছুটা পতনের পর আবারও শক্তিশালী হয়েছে জাপানি ইয়েন। নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে ইয়েনের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে। বিনিয়োগকারীরা এখন নজর রেখেছেন ব্যাংক অফ জাপানের পরবর্তী সিদ্ধান্তের দিকে। জানুয়ারিতে সংস্থাটি স্বল্পমেয়াদী সুদের হার বাড়িয়ে ০.৫ শতাংশ করেছিল। এখন ইঙ্গিত মিলছে, ভবিষ্যতে তা আরও বাড়তে পারে।

নিক রিস বলেন, 'আমরা মনে করি ব্যাংক অফ জাপান ধীরে এগোবে, তবে সেই ধীর গতিও ইয়েনের মান বৃদ্ধিকে ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট।'

সব মিলিয়ে, ফেডের ওপর রাজনৈতিক চাপ এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য নিয়ে অনিশ্চয়তা ডলারের স্থিতিশীলতায় বড় ধাক্কা দিয়েছে। আর সেই সুযোগে শক্ত অবস্থানে যাচ্ছে ইউরো, পাউন্ড, ইয়েন ও ফ্রাঙ্ক।

সূত্র- রয়টার্স


আমার বার্তা/এল/এমই