এনবিআর বিলুপ্তির প্রতিবাদে দেশজুড়ে অচলাবস্থা
পঞ্চম দিনে গড়ালো কলমবিরতি
প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৫, ১১:৩৪ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে প্রণীত ‘রাজস্ব অধ্যাদেশ ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে সোমবার (১৯ মে) পঞ্চম দিনের মতো কলমবিরতি পালন করছেন রাজস্ব প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব কর অঞ্চল, কাস্টম হাউজ, শুল্ক স্টেশন ও ভ্যাট কমিশনারেট অফিসে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত একযোগে এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
সরকার গত ১২ মে গভীর রাতে এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে এনবিআর বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ নামে দুটি পৃথক সংস্থা গঠনের ঘোষণা দেয়। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আন্দোলনে নেমেছেন রাজস্ব কর্মকর্তারা।
তাদের অভিযোগ, সরকারের গঠিত পরামর্শক কমিটির সুপারিশ ও শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রস্তাব উপেক্ষা করে হঠাৎ করে এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করায় তারা হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে
রোববার (১৮ মে) এনবিআর ভবনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন—‘রাজস্ব অধ্যাদেশ ২০২৫’ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত কলমবিরতি কর্মসূচি চলবে। তারা কোনো আলোচনায় অংশ নেবেন না বলেও জানান।
সোমবারের কর্মসূচি অনুযায়ী, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে কর্মবিরতি পালিত হয়েছে।
আন্দোলনের নেত্রী অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকী বলেন, “এই সংস্কার কেবল এনবিআর কর্মকর্তাদের দাবি নয়; করদাতা, ব্যবসায়ী ও সিভিল সোসাইটির যৌক্তিক প্রত্যাশা। অথচ সবাইকে অন্ধকারে রেখে গোপনে এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এনবিআরের অর্ধশত বছরের ঐতিহ্যবাহী কাঠামো কোনো যৌক্তিকতা ছাড়াই ভেঙে ফেলা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক রীতিনীতির পরিপন্থী।”
অতিরিক্ত কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা জানান, “অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আলোচনায় বসার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও এখনো আমরা কোনো অফিসিয়াল আমন্ত্রণ পাইনি। আলোচনার কাঠামো, প্রতিনিধি সংখ্যা কিংবা সময়সূচি—কোনোটিই স্পষ্ট নয়।”
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজসহ দেশের বিভিন্ন শুল্ক অফিসে কলমবিরতির প্রভাব পড়েছে আমদানি কার্যক্রমে। প্রতিদিন যেখানে ৩,০০০ থেকে ৩,৫০০ বিল অব এন্ট্রি প্রক্রিয়াকরণ হতো, তা কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে জানা গেছে। এতে আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্টদের ভোগান্তি বাড়ছে।
তবে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, রপ্তানি কার্যক্রম ও বাজেট-সংশ্লিষ্ট কাজ আন্দোলনের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামী মঙ্গলবার (২০ মে) বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা আল আমিন শেখ জানিয়েছেন, আলোচনায় কারা অংশ নেবেন বা আদৌ আলোচনা অফিসিয়ালি হবে কি না—সে বিষয়ে এখনো কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।
এনবিআর বিলুপ্ত করে জারি করা অধ্যাদেশ নিয়ে রাজস্ব প্রশাসনের অন্দরে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে। আন্দোলনকারীরা অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে অনড় অবস্থানে রয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক বার্তা এলেও অনানুষ্ঠানিকতা ও স্বচ্ছতার অভাবে কর্মকর্তারা এখনো আলোচনায় আগ্রহী নন।
পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা নির্ভর করছে সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর।
আমার বার্তা/জেএইচ