স্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় অবসরে ডিআইজি
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:১৫ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার সন্তান হামিদুল আলম মিলন। দীর্ঘ চার দশকের পুলিশ ক্যারিয়ার, একাধিক দায়িত্ব পালনকালে তিনি ছিলেন আলোচিত ব্যক্তি। কিন্তু একইসঙ্গে নানা বিতর্ক পিছু ছাড়েনি তার। অবশেষে চাকরি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তাকে বিদায় নিতে হলো স্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার দায়ে।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে গত বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) জারি হওয়া প্রজ্ঞাপনে তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এক মাসের জন্য অসুস্থতার অজুহাতে ছুটি নেন অতিরিক্ত ডিআইজি মিলন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ওই সময় তিনি বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে স্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নেমে পড়েন। শুধু তাই নয়, স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ ও অন্যান্য মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে নির্বাচনী কৌশল সাজান। একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা নির্বাচনী প্রচারণায় সরাসরি অংশ নিচ্ছেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। ফলে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিসিপ্লিন উইংয়ের ডিআইজি তদন্ত শুরু করেন। তদন্তে প্রমাণ হয়, হামিদুল আলম মিলন সরকারি চাকরির বিধি ভঙ্গ করেছেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে প্রমাণিত অভিযোগ সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি ৩(খ) এবং সরকারি কর্মচারী আইন, ২০১৮-এর ৪৫(১) ধারার আওতায় ‘অসদাচরণ’ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নিরপেক্ষতা হারানো, রাজনৈতিক প্রচারণায় যুক্ত হওয়া এবং দায়িত্ব থেকে বিরত থাকা সবকিছুই তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ হিসেবে ধরা হয়।
হামিদুল আলম মিলনের পুলিশি ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে। ধাপে ধাপে তিনি পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি পর্যন্ত পৌঁছান। দায়িত্বে থেকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলা ও অভিযান পরিচালনা করেছেন তিনি।
সহকর্মীরা জানান, তার ক্যারিয়ারের সঙ্গে বিতর্ক লেগেই ছিল। কোথাও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, কোথাও অতিরিক্ত প্রভাব খাটানোর অভিযোগ, আবার কোথাও সমালোচিত সিদ্ধান্ত তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বিশেষ করে নিজ জেলা বগুড়ায় রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা নিয়েই তার নাম বারবার আলোচনায় এসেছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি-সোনাতলা এলাকায় হামিদুল আলম মিলনের পরিচিতি শুধু পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে নয়, স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিল। এলাকার মানুষ জানতেন তার পরিবারের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা রয়েছে। স্ত্রীকে নির্বাচনে প্রচারে দেখা গেলে মিলনের ভূমিকা নিয়েও মানুষের প্রশ্ন ছিল।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা হয়েও রাজনৈতিক প্রচারণায় যুক্ত হওয়ার ঘটনা অনেককে হতবাক করেছে। স্থানীয়দের ভাষায়, দীর্ঘদিন ধরে তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার অভিযোগ ছিল। এবার সেটা প্রমাণিত হলো।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, একজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে মিলনের কর্মকাণ্ড শৃঙ্খলাভঙ্গ, অনৈতিক ও নীতিবিরুদ্ধ। এজন্য তাকে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো ছাড়া সরকারের আর কোনো বিকল্প ছিল না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের শাস্তি শুধু একজন কর্মকর্তার জন্য নয়, গোটা প্রশাসনের জন্যও একটি বার্তা। সরকারি চাকরিজীবীরা যদি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন, তবে তাদের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তিনি সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে সব দায়িত্ব ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বাদ পড়লেন।
আমার বার্তা/জেএইচ