ফরিদপুরে বিপৎসীমার ওপরে নদ-নদী, বন্যা-ভাঙনে দুর্ভোগে চরবাসী

প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ১১:০১ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

ফরিদপুরে আড়িয়াল খাঁ নদ ও পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তলিয়ে যাচ্ছে একের পর এক গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন সদরপুর উপজেলার অন্তত তিন ইউনিয়নের প্রায় এক হাজার পরিবার। পাশাপাশি দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ভাঙন আতঙ্কে ভিটেমাটি ছেড়ে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন চরাঞ্চলের বাসিন্দারা।

গত প্রায় এক সপ্তাহে আড়িয়াল খাঁ নদ ও পদ্মা নদীর ভাঙনে ঢেউখালী ও আকোটেরচর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের শতাধিক বিঘা জমি পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকিতে রয়েছে নদীর পাশে থাকা ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আড়িয়াল খাঁ নদের পানি বেড়ে বিপদসীমার ১০৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃদ্ধি পেয়েছে পদ্মা নদীর পানিও। এরই মধ্যে উপজেলার আকোটেরচর ইউনিয়নের পদ্মা পাড়ে অবস্থিত শয়তানখালী ট্রলার ঘাটের পাকা রাস্তা নদী ভাঙন থেকে রক্ষায় জিও ব্যাগ ফেলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সদরপুর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টি ইউনিয়ন পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদী বেষ্টিত। এর মধ্যে চরনাছিরপুর, দিয়ারা নারিকেল বাড়িয়া, চরমানাইর তিন ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়ে গেছে। ফসলি জমি,ঘরবাড়ি, তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে চরবাসী। পানির নিচে রয়েছে আউশ ধান। পদ্মার চরের নিম্নাঞ্চলের আবাদি জমি ও চলাচলের রাস্তা প্লাবিত হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বসবাসের ঘরবাড়ি এখনো প্লাবিত না হলেও বন্যার আশঙ্কায় দিনরাত রয়েছে ইউনিয়নের বাসিন্দারা। অপরদিকে ঢেউখালী ও আকোটেরচর ইউনিয়নের নদীপাড়ের কয়েকটি গ্রামে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় কৃষক খলিল শেখ জানান, বন্যাকবলিত তিনটি ইউনিয়নের চরাঞ্চলে কয়েক শতাধিক হেক্টর জমির মরিচ, সবজি, কলার বাগান, আউশ ধান ও বিভিন্ন ধরনের ফসলের ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।

চরনাছিরপুর ইউনিয়নের খলিফা কান্দি গ্রামের বাসিন্দা মো. চুন্নু শেখ বলেন,নদে পানির বৃদ্ধির কারণে হঠাৎ করে গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। পানিতে গ্রামের রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। এখন নৌকা ছাড়া যোগাযোগ চলাচলের উপায় নেই। গবাদি পশু নিয়েও অনেক সমস্যার মধ্যে মানুষ। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে কয়েক দিনের মধ্যেই বড় আকারে বন্যায় রূপ নেবে।

এ ব্যাপারে দিয়ারা নারিকেলবাড়ীয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নাসির সরদার জানান, ইউনিয়নটিতে প্রায় ৩৮টি গ্রাম রয়েছে। এর মধ্যে নিম্মাঞ্চলের অধিকাংশ গ্রাম এখন পানিতে প্লাবিত। দু’একদিনের মধ্যে সবগ্রামগুলো পানিতে প্লাবিত হয়ে যাবে। মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশু নিয়ে এখন চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছে ইউনিয়নের বাসিন্দারা।

চরনাছিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রোকন উদ্দীন মোল্যা বলেন, ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। অধিকাংশ বসতবাড়িতে না পানি উঠলেও তলিয়ে মাঠের আবাদি ফসল। এছাড়াও যোগাযোগের জন্য নতুন মাটির রাস্তাঘাট নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলো তলিয়ে গিয়ে ক্ষতির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকিয়া সুলতানা বলেন, বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নদীপাড়ের বাসিন্দাদের জন্য নিরাপত্তার কথা সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের জানানো হয়েছে। সে ক্ষেত্রে জরুরি পরিষেবা নেওয়া হবে।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব হোসেন জানান, নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বৃদ্ধির কারণে নদীতে স্রোতের পরিমাণ বেড়েছে। আর এতেই নদ-নদীর বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে ভাঙ্গনকবলিত জরুরি স্থানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।


আমার বার্তা/জেএইচ