তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, লালমনিরহাটে ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি

প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১৯:১১ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে লালমনিরহাট জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২.১৫ মিটার)। যা বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর। এর আগে দুপুর ১২টায় পানি বিপৎসীমার ১৮  সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ১৫ সেন্টিমিটার ও ভোর ৬টায় ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।

জানা গেছে, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ আদিতমারী ও লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তার নিম্নাঞ্চলুগুলো প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারী, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী ও ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈলমারী, নোহালী, আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, বাহাদুরপাড়া, পলাশী এবং সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুর খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে রোপা আমন ধান। বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে ভুগছেন পানিবন্দি মানুষগুলো। 

তিস্তাপাড়ের স্থানীয় বাসিন্দা এনামুল কবির বলেন, সোলার প্যানেলের কারণে পানির চাপ পড়ছে লোকালয়ের রাস্তা ও বাঁধে। এগুলো রক্ষা করা না হলে হাজার হাজার বসতভিটা আর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হবে। তখন নদী এসে পৌঁছাবে উপজেলা শহরে।

তিস্তাপাড়ের গোবর্ধন গ্রামের বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন জানান, বুধবার সকাল থেকেই নদীর পানি দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে। ফলে চরাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট ডুবে গেছে এবং মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, তিস্তার পানি হু হু করে বাড়ছে। আমাদের জীবনযাপন এখন খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।

পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের দিনমজুর সামসুল আলম জানান, নিচু এলাকায় পানি ঢুকে পড়ায় পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রাস্তা-ঘাট ডুবে গেছে। 

তিনি বলেন, পশুপাখি, শিশু, বৃদ্ধ আর প্রতিবন্ধীদের নিয়ে মানুষ চরম বিপাকে আছে। আমাদের বাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে। কিন্তু কেউ খোঁজখবর নিচ্ছে না। তাই প্রশাসনের কাছে দ্রুত সহযোগিতা চাই।

ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, বুধবার থেকেই তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে আমার ইউনিয়নের ছয়টি ওয়ার্ডের পাঁচ হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়ি, ফসলের জমি, রাস্তা-ঘাট সবকিছু পানির নিচে চলে গেছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। মানুষ চরম দুর্ভোগে আছে। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থরা বেশি বিপদে পড়েছেন। অনেক পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। গবাদি পশু ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। আমি উপজেলা প্রশাসনসহ রাজনৈতিক নেতাদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, দ্রুত ত্রাণ সহায়তা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে মানুষের পাশে দাঁড়ান।

তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টের পানির লেভেল পরিমাপক নুরুল ইসলাম বলেন, উজানের ঢলে ভারী বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার নিম্নাঞ্চলের মানুষদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে।  

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানান, তিস্তা নদীর পানি বর্তমানে (বিকেল ৩টায়) বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ডালিয়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা ৫২ দশমিক ৩০ মিটার, যেখানে বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ মিটার। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে স্বল্পমাত্রার বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত সমাধানের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুত রয়েছে।


আমার বার্তা/এমই