পাটের আবাদ কমেছে নেত্রকোনার হাওড়াঞ্চলে
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৫, ১৭:০৫ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

নেত্রকোনার হাওড়াঞ্চলে পাটের উৎপাদন কালের আবর্তে অনেক কমেছে এই ফসলের আবাদ। তবে এ অঞ্চলে আবারও পাটের উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ চাষি ও পরিবেশবিদদের। রপ্তানিমুখী এই ফসলের আবাদ বাড়ানোর মাধ্যমে আবারও গড়ে উঠতে পারে পরিবেশ বান্ধব কলকারখানা। ব্যবসার প্রসার ঘটবে এলাকায়।
লাভজনক এই ফসলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক চাকা ঘুরতে পারে বলে দাবী করছেন স্থানীয়রা। তবে এর জন্য প্রয়োজন কৃষকদের উদবুদ্ধকরণ কর্মসূচি গ্রহণসহ পাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা। এক সময় নেত্রকোনা অঞ্চলের প্রসারই ঘটেছিল এই পাটের জন্য। নদীপথে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হতো পাট রপ্তানি।
পাটের ফলন এমনই ছিল যে শত বছর পূর্বে পাটেশ্বরী নদীই ছিল। যে নদী দিয়ে নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌকায় যেত পাট এবং ধান। নেত্রকোনা জেলার প্রধান ফসল ছিল পাট ধান ও মাছ। সবই এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। ৮০০ থেকে হাজার বছর আগে নৌকায় এসে সওদাগররা ব্যবসা করতেন। তেমন নিদর্শনও রয়েছে। কেন্দুয়ায় ৮০০ বছরের পুরনো মসজিদ, রোয়াইল বাড়ি দুর্গ। এমনকি কলমাকান্দা উপজেলার সীমান্ত উপজেলা এলাকায় চন্দ্রডিঙ্গা নামের পাহাড় রয়েছে। যেখানে চাঁদ সওদাগরের নৌকা ডুবেছিল।
লোকমুখে এসব খবর আজও ভেসে বেড়ালেও কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে যেসব ফসলের জন্য এই এলাকা দিয়ে বাণিজ্য গড়েছিল সেই সব ফসল। তার মধ্যে অন্যতম ছিল পাট। এ পাটের আবাদই এখন বিলুপ্তির পথে।
প্লাস্টিকজাত পণ্য এসে দেশের এমন অর্থকড়ি ফসলের ক্ষতি করেছে। ক্ষতি করেছে পরিবেশের। ক্ষতি করেছে মানবসম্পদের। অথচ এই অর্থকড়ি ফসলের দিকে নজর নেই দেশের সরকারসহ বিভিন্ন গবেষকদের। এমনটা দাবি পরিবেশকর্মীদের।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ নিয়ে কাজ করা উপদেষ্টার দিকে তাকিয়ে রয়েছে এখন তারা। তিনি যদি বাংলাদেশের মানুষকে সুস্থ সুন্দর রাখতে আবারও পরিবেশবান্ধব ফসল পাটের ব্যবহার এবং উৎপাদনে ভূমিকা রাখেন, তাহলে অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি সবদিক থেকে আবারও এ অঞ্চল ঘুরে দাঁডাবে বলে মনে করেন গবেষকরা। পাটচাষিদের অনেকে কোনো রকমে বাপ দাদার করা ফসলের দিকে এখনও তাকিয়ে রয়েছেন।
মদন উপজেলার হাঁসকুড়ি গ্রামের কৃষক পাটচাষি মো. শরীফ জানান, বাপ-দাদার সাথে সাথে তিনি কৃষি কাজ করে বেড়ে উঠছেন। তিনিই এক সময় ৩০ থেকে ৪০ কাঠা জমিতে গেল কয়েক বছর আগেই চাষ করতেন পাট। কিন্তু কমতে কমতে এবার মাত্র ১০ কাঠা জমিতে এই পাটের আবাদ করেছেন। লাভ নেই। জমিটা পড়ে থাকবে তাই নিজেদের কাজের জন্য কিছু পরিমাণ করেন। এগুলো প্রক্রিয়া করে বিক্রির সময় দাম পাওয়া যায় না তাই তারা আগ্রহ হারাচ্ছেন। ধান চাষ করে ফেলেন বাকি জমিতে। পাটের দাম কেন কম দেয় সেটা তো সরকার জানে। সরকার ধানের মতো করে একটা ফিক্সড দর ধরে দিলেও আবার পাট চাষ করার সাহস বাড়বে বলে জানান তিনি।
পরিবেশকর্মী বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. অহিদুর রহমান বলেন, এক সময় এ অঞ্চলের প্রসার ঘটেছিল, এই পাটের ব্যবসার জন্য। কিন্তু এখন তা গল্প ছাড়া কিছুই না। পাট শুধু যে অর্থকড়ি ফসল তা কিন্তু নয়। পাটের পণ্য ব্যবহার করতে এখন যে তাগিদ দেয়া হচ্ছে এটি আরও আগে থেকেই বলা হচ্ছিল, কিন্তু বিগত সরকারগুলো এর দিকে নজর দেয়নি। ফলে এখন যেমন পরিবেশ বিপর্যয় ঘটেছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটা ভয়াবহ পরিস্থিতিতে গিয়েছে এটা হতো না। প্লাস্টিকগুলো ৫০০ বছরেও পচে না। এ যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে এর থেকে বের হতে হলে আগে জরুরি পাটের আবাদ বাড়ানো। পাটকলগুলো সক্রিয়করণ। পাশাপাশি পাটের অঞ্চলগুলোতে প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এতে দেশেই স্থানীয়ভাবে বাড়বে কর্মসংস্থান। উৎপাদন হবে ভালো পাট। চাষিরা ফিরে যাবে তাদের সেই আবাদে। ধানের মতো এটিও একটি লাভজনক ফসল। তাই সরকারের উচিত হবে এই সোনালী আঁশ নামের প্রধান আরেকটি ফসলকে পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে দেশের রপ্তানি খাতকে শক্তিশালী করা।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি) উপপরিচালক (ডিডি) কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানান, পাট সোনালী আঁশ থাকলেও এখন এটি এখানে প্রতিবছর কমে যাচ্ছে। এর কারণ কৃষকরা ধানের পাশাপাশি সব্জি জাতীয় এবং সরিষাসহ অন্যান্য লাভজনক ফসল করায় পাটের আবাদ কমে যাচ্ছে। এ বছর ৪ হাজার ৫ শত ৯০ হেক্টর পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও অর্জিত হয়েছে ৪ হাজার ৪ শত ১০ হেক্টর। কোন এক সময় এ অঞ্চলে পাট বেশি হলেও দিনে দিনে এখন কমছে।
তিনি জানান, পাটের ব্যবহার বাড়ালে আবারও চাহিদা বাড়বে তখন একটা সম্ভাবনা থাকে পাটের আবাদের।
পাট জাত পন্য তৈরি হলে বাজার মুল্য বাড়বে। তখন যদি আবারও কৃষক ভাইয়েরা আগ্রহী হবেন। এছাড়া তেমন সম্ভাবনা নেই। কারণ খরচ এবং কষ্ট দুটোই বেশি হয়। কিন্তু দাম পায়না। সব মিলিয়ে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক। সরে যাচ্ছে এর আবাদ থেকে। কৃষিতে সরকার থেকে প্রণোদনা প্রোগ্রাম নেয়া হয়। পাটের জন্য গত বছর কৃষি বিভাগ থেকে নেত্রকোনার ৪ হাজার কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছিল।
আমার বার্তা/এল/এমই