মাদারীপুরে অকেজো ৩৪ স্লুইস গেট

প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৫, ১৩:৩৪ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

মাদারীপুরে নদ-নদী আর খালের ওপর ব্রিটিশ আমলে বসানো ৩৪টি স্লুইস গেটের সবগুলোই অকেজো হয়ে পড়ে আছে কয়েক যুগ ধরে। ফলে স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটা ব্যাহত হচ্ছে। কৃষিকাজেও কোনো কাজে আসছে না এসব গেট। ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দাঁড়ানো স্লুইস গেটগুলোর কারণে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গেটগুলো সচল করতে প্রকল্প নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মাদারীপুরের মোস্তফাপুরে কুমার নদীর উপর ব্রিটিশ আমলে নির্মিত একটি স্লুইস গেট পুরোপুরি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। পলি জমে গেছে, জলকপাটে ধরে গেছে মরিচা, আর চারপাশজুড়ে ছেয়ে গেছে ঘাস-লতাপাতা। পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কোনো সুফলই মিলছে না। একই অবস্থা চোকদার ব্রিজের পাশের খালের উপর থাকা স্লুইস গেটটিরও। কোনো ধরনের নজরদারি না থাকায় খোয়া যাচ্ছে যন্ত্রাংশ।

জানা গেছে, রাজৈরের আমগ্রাম, কালকিনির রমজানপুরসহ জেলার পাঁচটি উপজেলায় বসানো ৩৪টি স্লুইস গেটের মধ্যে ২৯টি পুরোপুরি অকেজো। বাকি ৫টি কোনও মতে দাঁড়িয়ে থাকলেও সেগুলো মেরামতের অযোগ্য। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পদ নষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ অবস্থায় ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজও।
 
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র বলছে, জেলার পাঁচটি উপজেলায় কাগজে-কলমে ১৭টি নদ-নদী থাকলেও বাস্তবে ২৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পদ্মা, পালরদী, আড়িয়াল খাঁ, ময়নাকাটা, বিষারকান্দি প্রভৃতি মিলে দৃশ্যমান নদ-নদীর সংখ্যা ১০টি। সাড়ে তেরো লাখ মানুষের এই জেলায় মোট আয়ের ৬২ শতাংশ আসে কৃষি খাত থেকে। নদ-নদীর প্রবাহপথ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেছে এসব স্লুইস গেটের কার্যক্রম। এখন এলাকাবাসীর প্রত্যাশা-জোয়ারভাটার স্বাভাবিকতা রক্ষা ও কৃষিকাজে পানির সঠিক ব্যবহারের জন্য গেটগুলো আবারও সচল হোক।
 
ঘটমাঝি ইউনিয়নের চোকদার ব্রিজ এলাকার বাসিন্দা মকবুল ব্যাপারী বলেন, ‘স্লুইস গেটটি সচল থাকলে এলাকার মানুষের অনেক কাজে আসতো। কৃষিকাজে পানির সঠিক ব্যবহার হলে কৃষকরাও লাভবান হতো। কিন্তু কয়েক যুগ ধরে এগুলো বন্ধ থাকায় মালামাল চুরি হচ্ছে। কেউ কোনো নজরদারি করছে না।’
 
সৌদি প্রবাসী লুৎফর রহমান বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি এই স্লুইসটি বন্ধ। দাদা-দাদির মুখে শুনেছি এগুলো এক সময় অনেক কাজে লাগতো। রক্ষণাবেক্ষণের অভাব আর কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় দিনের পর দিন এগুলো অকেজো হয়ে পড়ে আছে। যন্ত্রাংশও চুরি হচ্ছে, এতে সরকারের কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে।’
 
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাদারীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘নতুন করে স্লুইস গেট নির্মাণে পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। একটি প্রকল্পের অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলেই কাজ শুরু করা হবে।’


আমার বার্তা/এল/এমই