গাইবান্ধায় আদিবাসী বাঙালিদের মিলনমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব
প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৫, ২১:৫১ | অনলাইন সংস্করণ
মোঃইসমাইল সিরাজী,গাইবান্ধা প্রতিনিধি(মাল্টিমিডিয়া):

সাঁওতালসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ভাষা-সংস্কৃতি সংরক্ষণ, বিকাশ, অধিকার ও বৈচির্ত্য রক্ষায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি নয় আদিবাসী পরিচয়ের স্বীকৃতি দাবি করেছেন সাঁওতালসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর যুব নারী-পুরুষ। তারা বলেছেন, আদিবাসী সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে বিভ্রানি- রয়েছে। জনসাধারণ আদিবাসী এবং দলিত কারা তা জানে না। তাদের নিজস্ব রীতিনীতি, মূল্যবোধ, খাদ্যাভ্যাস, সামাজিক কার্যকলাপ, চিকিৎসা ব্যবস্থা, বিবাহ ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড রয়েছে। আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় বাঙালি জনগোষ্ঠীকে আরও সংবেদনশীল হতে হবে।
শনিবার (২৪ মে) বেলা ১২ টার দিকে গাইবান্ধা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আদিবাসী-বাঙালি যুব মিলনমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসবে তারা এসব কথা বলেন। উৎসবের স্লোগান ছিল, অধিকার, জীবিকা ও সংস্কৃতি রক্ষায় আদিবাসী-বাঙালি যুব মিলি একতায়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড ও আটিকেল নাইনটিন এর সহযোগিতায় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা অবলম্বন এই উৎসবের আয়োজন করে। ইয়ুথ লিডার ললিতা কিস্কুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন অবলম্বনের নির্বাহী পরিচালক প্রবীর চক্রবর্তী।
উক্ত অনুষ্ঠানে আলোচনা রাখেন, গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (রাজস্ব শাখা ও ভিপি শাখা) মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী, সমাজসেবা অধিদপ্তর গাইবান্ধার উপ-পরিচালক মো. ফজলুল হক, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মাহফুজার রহমান, উদীচী জেলা সভাপতি অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুম, গাইবান্ধা প্রেসক্লাব সভাপতি অমিতাভ দাশ হিমুন, এনজিও বিষয়ক কনসালটেন্ট সালমা পারভীন, ইয়ুথ লিডার স্মরণিকা মার্ডি প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শিরিন আকতার
আলোচকেরা বলেন, বহু সংস্কৃতি, বহু ভাষা আর বহু জাতির সম্মিলনে বাংলাদেশ একটি জাতি- বৈচির্ত্যের দেশ। এ দেশের পাহাড় থেকে সমতলে ৫০টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী বাস করে- যাদের রয়েছে স্বতন্ত্র ভাষা ও নিজস্ব সংস্কৃতি। তারা সংখ্যায় প্রায় ৪০ লক্ষাধিক, যা মূল বাঙালি জনগোষ্ঠীর প্রায় ২ ভাগ। এদেশের বৈচিত্রময় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে সংখ্যাগুরু বাঙালিদের পরিচয় নেই বললেই চলে। মূলধারার জনগোষ্ঠীর অবহেলা এবং রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের অভাবে আদিবাসীদের ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি আজ প্রায় বিপন্ন। কিছু কিছু এর মধ্যেই হয়ে গেছে বিলুপ্ত। এই বিপন্ন সংস্কৃতি উদ্ধার এবং বিকাশে প্রয়োজনে এ আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এর আগে সকাল ১০টায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের জন্য বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন হাতে তিন শতাধিক সাঁওতালসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর যুব নারী-পুরুষ তাঁদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে শোভাযাত্রাটি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবারও শিল্পকলা একাডেমিতে এসে শেষ হয়। সকাল ১১টায় শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন অতিথিবৃন্দ। এরপর আলোচনা সভা শেষে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিল্পীরা একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন।
অবলম্বনের নির্বাহী পরিচালক প্রবীর চক্রবর্তী জানান, অবলম্বন গত ১৫ বছর ধরে গাইবান্ধা জেলার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। এসব জাতিগোষ্ঠীর মানুষ মূলধারার উন্নয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন এবং তারা প্রান্তিকতার শেষ সীমায় বাস করেন। অবলম্বন তাদের জীবিকা, অধিকার এবং মূলধারার উন্নয়নের সাথে সমপৃক্ত করে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর সংস্কৃতি সংরক্ষণ করতে চায়।