বড়াইগ্রামে কৃষি প্রণোদনা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ
প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:৫২ | অনলাইন সংস্করণ
মোঃ হযরত আলী ( মাল্টিডিয়া প্রতিনিধি) নাটোর :
নাটোরের বড়াইগ্রামে চলতি রবি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনায় বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকৃত কৃষকদের এ সার-বীজ না দিয়ে ভূয়া তালিকা করে তা আত্নসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা। জানা গেছে, উপজেলার ৭ টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় সরকারি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে প্রণোদনা বিতরণের জন্য কৃষকের একটি তালিকা প্রণয়ন করা হয়। প্রনোদনার চূড়ান্ত বিভাজন ইউনিয়ন ও পৌরসভা ওয়ারী মোট বরাদ্দকৃত কৃষক সংখ্যায় গম ৪৫০০, ভুট্টা ৪৫০, সরিষা ১৪০০, চিনাবাদাম ১০, শীতকালীন পেঁয়াজ ৫৫, মসুর ৩৫০, খেসারি ১৫০ জন , তাতে কৃষক প্রণোদনা সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৯১৫ জন।
তন্মধ্যে জোয়াড়ী ইউনিয়নে গম ৯০০, ভুট্টা ১০০, সরিষা ১১০, চিনাবাদাম ২, শীতকালীন পেঁয়াজ ৫, মসুর ৬০, খেসারি ৫, মোট ১,১৮২ জন্য কৃষক। বড়াইগ্রাম ইউনিয়নে গম ৪০৫, ভুট্টা ২৫, সরিষা ৮০, চিনাবাদাম ২, শীতকালীন পেঁয়াজ ৫, মসুর ২০, খেসারি ১০, মোট ৫৪৭ জন।জোনাইল ইউনিয়নে গম ৭২০, ভুট্টা ২০, সরিষা ৮০, চিনাবাদাম ২, শীতকালীন পেঁয়াজ ৫, মসুর ২০, খেসারি ৫, মোট ৮৫২ জন। নগর ইউনিয়নে গম ৯০০, ভুট্টা ৪০, সরিষা ১৭০, চিনাবাদাম ১, শীতকালীন পেঁয়াজ ১০, মসুর ১০৫, খেসারি ৩৫, মোট ১২৬১ জন।মাঝগাঁও ইউনিয়নে গম ৮১০, ভুট্টা ৪৫, সরিষা ৩২০, চিনাবাদাম ২, শীতকালীন পেঁয়াজ ৫, মসুর ৭০, খেসারি ১৫, মোট ১২৬৭ জন।গোপালপুর ইউনিয়নে গম ২৭০, ভুট্টা ৫৫, সরিষা ৩৬০, চিনাবাদাম ০, শীতকালীন পেঁয়াজ ১০, মসুর ৪০, খেসারি ১০, মোট ৭৪৬ জন।চান্দাই ইউনিয়নে গম ২২৫, ভুট্টা ১১৫, সরিষা ১৮০, চিনাবাদাম ১, শীতকালীন পেঁয়াজ ৫, মসুর ২০, খেসারি ৬০, মোট ৬০৫ জন।বনপাড়া পৌরসভায় গম ২২৫, ভুট্টা ৪০, সরিষা ৭০, চিনাবাদাম ০, শীতকালীন পেঁয়াজ ৫, মসুর ৫, খেসারি ৫, মোট ৩৫০ জন।বড়াইগ্রাম পৌরসভায় গম ৪৫, ভুট্টা ১০, সরিষা ৩০, চিনাবাদাম ০, শীতকালীন পেঁয়াজ ৫, মসুর ১০, খেসারি ৫, মোট ১০৫ জন।
নিয়ম অনুযায়ী কৃষক প্রতি ১। গম বীজ ২০ কেজি (ডিএপি ১০ কেজি,এম ও পি ১০ কেজি), ২। ভুট্টা বীজ ২ কেজি ( ডিএপি ২০ কেজি, এম ও পি ১০ কেজি) ৩। সরিষা বীজ ১ কেজি ( ডিএপি ১০ কেজি , এম ও পি ১০ কেজি) ৪।চিনাবাদাম ১০ কেজি(ডিএপি ১০ কেজি, এম ও পি ৫ কেজি) ৫।শীতকালীন পেঁয়াজ ১ কেজি ( ডি এ পি ১০ কেজি - এম ও পি ১০ কেজি)। ৬। মসুর ৫ কেজি ( ডি এ পি ১০ কেজি - এম ও পি ৫ কেজি) ৭। খেসারি ৮ কেজি ( ডি এ পি ১০ কেজি- এম ও পি ৫ কেজি) বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
মাঠপর্যায়ের অসাধু কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও সিন্ডিকেটের কারণে প্রকৃত কৃষকরা সার, বীজ ও প্রণোদনা পাচ্ছে না। মাঠ কর্মকর্তারা প্রতি বছর ঘুরেফিরে তাদের পছন্দের লোকদের নাম মাত্র তালিকা করে সার-বীজ ও কৃষি প্রণোদনা তুলে তা নিজেরাই অন্য জায়গায় বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে কিছু কৃষি উপসহকারীদের বিরুদ্ধে।এখানেই শেষ নয় স্থানীয় সাংবাদিকরা রবি মৌসুমের কৃষকদের প্রণোদনা তালিকা চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানান ভারপ্রাপ্ত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহাদি হাসান।শীতকালীন প্রণোদনায় সবজি বীজ বিচরণের জন্য প্রায় চার লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় এই উপজেলায়, কিন্তু উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কোন কৃষককেই সঠিক সময়ে জানানো হয়নি সেই তথ্য, এই বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে জানাজানি হলে তড়িঘড়ি করে যেনতেন ভাবে কৃষকদের মাঝে প্রণোদনার সবজি বীজ বিতরণ করা হয়, তেমনি ২ কেজি ধান বীজ বিতরণেও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ, কৃষকদের তালিকা না করেই উপ-সহকারীদের সাথে যাদের সু সম্পর্ক তাদেরকেই এই ধান বীজ বিতরণ করা হয়।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,অধিকাংশ (ভুয়া) কৃষক প্রণোদনার উপকরণ পেয়ে বাজারের এক সার ব্যবসায়ীর দোকানে বিক্রি করে দিয়েছেন। এতে সরকারের মহতী উদ্যোগ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হতে চলেছে। এ ব্যাপারে উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের কৃষি উপসহকারী তারিক বিন আমীন জানান, সার ও বীজ বিতরণে জন্য আমার ইউনিয়নে তালিকা করার জন্য অফিস থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তালিকা করে অফিসে পাঠিয়েছিলাম সেই অনুযায়ী সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে।
কৃষি প্রণোদনা বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এবং প্রকৃত কৃষকদের প্রণোদনার তালিকা জানতে চাইলে উপজেলার সদ্য সাবেক ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা মাহাদি হাসান বলেন, কৃষকদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্য থাকে এজন্য তালিকা সাংবাদিকদের দিতে পারি না, এবং সরকারি প্রণোদনার মালামাল বিএডিসি তাদের সরবরাহ করে।
প্রণোদনা বিতরণ অনিয়মের দুর্নীতির অভিযোগে বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা মারফুদুল হক জানান, প্রণোদনার সার এবং বীজ উপজেলা চত্বর থেকে বিতরণ করা হয়, প্রতি ব্লকে ভাগ করে তালিকা প্রস্তুত ও বিতরণ করা হয়,আর এই বন্টন করতে গিয়ে যদি কোন অনিয়ম থাকে তাহলে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস জানান , প্রণোদনা বিতরণে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার কোন সুযোগ নেই, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।