১২ই ডিসেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আব্দুল মোমেন খান এর ৩৮ তম মৃত্যু বার্ষিকী নানা কর্মসূটি উদ্দ্যোগ গ্রহণ। মরহুমের মৃত্যু দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় বিএনপি, নরসিংদী জেলা বিএনপি, পলাশ উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে মরহুমের কবরে ফুল দিয়ে জিয়ারত, কোরআন তেলোয়াত, দোয়া মাহফিল আয়োজন করা হয়।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান (বীরউত্তম) এর মন্ত্রীসভার সফল সাবেক খাদ্যমন্ত্রী, সাবেক এমপি ও কেবিনেট সচিব এবং আধুনিক নরসিংদীর রুপকার আব্দুল মোমেন খান। ১৯১৯ সালের তৎকালীন ঢাকা জেলার কালীগঞ্জ থানাধীন চরনগরদী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন যা এখন নরসিংদী জেলার পলাশ থানার অন্তর্ভুক্ত। সত্তর ও আশির দশকে নরসিংদী মহকুমা জেলা ও পলাশ থানা প্রতিষ্ঠার জন্য তার অবদানই ছিল মুখ্য। স্বীকৃতি স্বরূপ এলাকাবাসীর কাছে তিনি আধুনিক নরসিংদীর রূপকার হিসেবে পরিচিত। খুব ছোট বেলা থেকেই তিনি মেধার পরিচয় দিয়ে আসছিলেন এবং প্রাথমিক পর্যায়ে স্কুল জীবনে ২য় শ্রেণী ও পরে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে মেধা বৃত্তি লাভ করেন। তাঁর বাবা আব্দুল বারী খান ছিলেন স্থানীয় মাইনর বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি ছিলেন মাহাত্বা গান্ধীর একনিষ্ঠ অনুসারী এবং ইংরেজদের বিরুদ্ধে “ভারত ছাড়” আন্দোলনে নিজ গ্রামের বর্ধিষ্ণ চরনগরদী বৃটিশ পণ্যের বর্জন উৎসবে নেতৃত্ব দেবার ফলশ্রুতিতে চাকরিচ্যুত হয়ে কারাবরণ করেন।
তিনি উন্নত শিক্ষার জন্য তার পুত্র আব্দুল মোমেন খানকে শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে কালীগঞ্জ রাজা কালী নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রেরণ করেন। এখন থেকে ১২০ বছরেরও আগে প্রতিষ্ঠিত রাজা কালী নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় তখন এ অঞ্চলের প্রসিদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুপরিচিত ছিল। মুলত পুরো গাজীপুর ও নরসিংদী এলাকার মধ্যে এ বিদ্যালয়টি খ্যাতির শীর্ষে ছিল এবং সে সময়কার ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যের প্রখ্যাত শিক্ষক হিসেবে পরিচিত আর কে নারায়ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিরেন সেনই আবদুল মোমেন খানকে তাঁর প্রতিষ্ঠানে আকৃষ্ঠ করে নিয়ে যান। মাঝে মাঝে প্রধান শিক্ষক তাঁর পরিবর্তে আবদুল মোমেন খানকে তাঁর নিজের ক্লাস নিতে বলতেন এবং পাশে দাঁড়িয়ে তার পর্যবেক্ষণ করতেন ও প্রয়োজনীয় নির্দশনাবলী প্রদান করতেন। সে সময় মেধাবী শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের জন্য বিশিষ্ট স্কুলসমুহে এ প্রদ্ধতির প্রচলন ছিল।
সফলতার সঙ্গে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর আবদুল মোমেন খান ঢাকায় আসেন এবং ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অবিভুক্ত বাংলায় পঞ্চম স্থান এবং মুসলিমদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর তিনি অর্থনীতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্বাতোকত্তর ডিগ্রি অর্জন করে তৎকালীন উপাচার্য ঐতিহাসিক আর.সি মজুমদার প্রদত্ত প্রশংসা পত্র লাভ করেন এবং সফলতার সাথে পাবলিক সার্ভিস কমিশন এর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বেঙ্গল সার্ভিস-এ যোগ দেন।
১৯৪২ সালে তিনি মরহুম খোরশেদা বানুর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, যিনি পরবর্তীকালে খান ফাউন্ডেশন ও পরবর্তিতে খান ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত দি মিলেনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ছিলেন। এ প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিষ্ঠার জন্মলগ্ন থেকে তার পুত্রবধু এডভোকেট রোখসানা খন্দার কর্তৃক সাফল্যের সাথে পরিচালিত হয়ে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে আবদুল মোমেন খান ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের প্রথম স্পীকার নির্বাচিত হন।
তিনি উপস্থিত বক্তৃতা বিতর্ক ও অন্যান্য সহশিক্ষা কার্যক্রমে খুবই পারদর্শী ছিলেন যা তার পরবর্তী পেশা জীবনকেও সমৃদ্ধ করে। একজন সরকারী চাকুরীজীবি হিসেবে আবদুল মোমেন খান যথাযোগ্য সুনাম অর্জন করেন এবং লাহোরে সিনিয়র সিভিল সার্ভিস একাডেমীতে প্রশিক্ষণ কোর্সে প্রথম স্থান অধিকার করেন, তৎকালীন রেক্টর ডিকে পাওয়ার (আই.সি.এস) পদত্ত প্রসংশা সুচক ব্যালেডিকটরিয়ান সম্মান অর্জন করেন। যোগ্যতার নিরিখে আবদুল মোমেন খান বাংলাদশে সরকারের সর্বোচ্চ চাকুরীর পদ কেবিনেট সচিবের আসনে আসীন হন।
তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত চাকুরী জীবনে এর আগে তিনি খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, প্রাদেশিক সরকারের গণর্পূত, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী এবং সেচ বিভাগের সচিব, এবং ১৯৭৭ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উপদেষ্টা কাউন্সিলে আমন্ত্রিত হন বাংলাদেশ সরকারের খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে (১৯৭৭-১৯৮২) এবং মন্ত্রীপরিষদ সচিব (১৯৭৬-১৯৭৭) দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নরসিংদী সদর থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। উল্লেখ্য এ নির্বাচনে তিনি সমস্ত বাংলাদেশ ৩০০ আসনে ২১৬৯ জন প্রার্থীর মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট লাভ করেন ১৯৮২ সাল পর্যন্ত খাদ্য মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তৎকালীন নরসিংদী থানা প্রাশাসনকে মহকুমা প্রশাসনে উন্নীত করেন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মহকুমা ও থানা সদর দফতর রেল লাইনের উত্তর পাশে নরসিংদীর বর্তমান বিলাসদী মহল্লায় স্থাপিত হয়।
তিনি বর্তমান তরোয়া মহল্লায় নরসিংদী স্টেডিয়াম স্থাপন করেন। ভেলানগরে স্থাপন করেন তৎকালীন মহকুমা ও বর্তমানে জেলা কারাগার। মরহুম আবদুল মোমেন খানের প্রচেষ্টায় নরসিংদীর মানুষ ১৯৭৯ সালে তিতাস গ্যাসের সংযোগ লাভ করে। শুধু তাই নয়, ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ঘোড়াশাল সার কারখানা স্থাপনে মরহুম আবদুল মোমেন খানের অবদান সর্বজনী স্বীকৃত। এই মহান নেতা ১৯৮৪ সালের ১২ইং ডিসেম্বর ইহলোক ত্যাগ করেন। তাঁর প্রতি এলাকাবাসীর ছিল গভীর শ্রদ্ধাবোধ। গ্রামের বাড়ী চরনগরদীতে তাঁর নিজেরই মানুষের পাশে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত।