প্রিয়জনের খোঁজে স্বজনদের ভিড় ঢামেক মর্গে

প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৪, ১৬:০০ | অনলাইন সংস্করণ

  মাসুদ রানা

বিগত কয়েকদিনের সহিংসতায় অজ্ঞাত নামা নিহতদের খোঁজে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ভিড় বেড়েছে স্বজনদের।
মঙ্গলবার (২৩জুলাই)সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ৬ জন অজ্ঞাত এবং ৩ জন জ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান ঢামেক মর্গের সহকারী বাবুল হোসেন।

বেলা ২টার দিকে নিখোঁজ প্রিয়জনের জন্য শনির আখড়ার থেকে লাবনী বেগম ছুটে আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে।ঘন্টার পর ঘন্টা নিখোঁজ স্বামীকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

তিনি জানান,আমার স্বামী রাসেল(২৪) পল্টন এলাকায় একটি ওষুধের প্যাকেজিং-এ কর্মচারী। গত শনিবার (২০ জুলাই) দুপুরের দিকে কর্মস্থলে যাবার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হলে তার কোনো খবর না পেয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি।সেকি বেঁচে আছে,না মারা গেছে কিছুই জানতে পারছিনা।কেবল এই হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে খুঁজছি তাকে।

অপরদিকে গত বৃহস্পতিবার(১৮ জুলাই ) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হ্রদয় চন্দ্র তরুয়া (২৬) গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন।

নিহতের বাবা রতন চন্দ্র তরুয়া জানান, ঘটনার সময় আমার ছেলে চাটগাঁ আবাসিক এলাকায় বিকেলের দিকে টিউশনি করতে বের হলে পেছন থেকে গুলিবিদ্ধ হয় সে। পরে আজ সকালে ঢামেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে(ICU) মারা যায় সে।

পটুয়াখালী সদরের নতুন বাজার এলাকায় আমার গ্রামের বাড়ি। "ভাই সাংবাদিকদের এসব বলে লাভ কি।আমার ছেলেকে তো আর ফিরে পাবনা না, ছেলের লাশ পেয়েছি এটাই আমার জন্য বড় পাওয়া",এই বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

আরেক ভূক্তভোগী জিলানী ইসলাম জানান, আমার বড় ভাই নাসির হোসেন (৩০)যাত্রাবাড়ীর রসিদবাগে দর্জির কাজ করতো। গত শনিবার (২০ জুলাই) দুপুরের দিকে বাসায় বিদ্যতের প্রিপেইড মিটারে কার্ড রিচার্জ করতে গিয়ে মাথা সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে মুগদা মেডিকেলে নিয়ে যাই। পরে সেখানে আজ সকালের দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।এখন ঢাকা মেডিকেল থেকে ময়নাতদন্ত শেষে ভাইয়ের লাশ বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি।

তিনি আরও জানান,জানিনা ভাইয়ের লাশ বাড়িতে নেয়ার পর কি হবে।মাকে এখনো কিছুই জানাই নি। কেননা মা হার্টের রোগী।

মর্গ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সহিংসতায় এ পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে প্রায় ৮৩ টি মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।  

গতকাল দুপুর পৌনে বারোটার দিকে সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডাঃ সামন্ত লাল সেন ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ রোকেয়া সুলতানা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে আসেন।

এসময় স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডাঃ সামন্ত লাল সেন জানান,এই সহিংসতা ঘটনার প্রেক্ষিতে ঢাকা মেডিকেল, মিটফোর্ড, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সহ ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে প্রচন্ড রোগীর চাপ ছিল। আমাদের প্রতিটি হাসপাতালের চিকিৎসক সড়ক স্বাস্থ্য কর্মীরা বাসায় না গিয়ে যেভাবে দিনরাত পরিশ্রম অকল্পনীয় সেবা দিয়েছে এজন্য তাদের সাধুবাদ ধন্যবাদ জানাই।

তিনি আরও জানান, আমি অত্যান্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে,এ সহিংসতায়
দুস্কৃতিকারীরা আমাদের ডিজি অফিসের
২৩ টি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। এবং ২৮ টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে।ওই দুস্কৃতিকারীরা
সেসময় সারাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা কন্ট্রোল করার মেশিনারি নষ্ট করে ফেলে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রী আরও জানান, আশেপাশের এই ধরনের হামলায় দুস্কৃতিকারীদের অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত। সারাদেশ সাংবাদিক সহ যারা মারা গেছেন তাদের জন্য আমরা অত্যন্ত দুঃখিত এবং সমবেদনার পাশাপাশি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।

এ সময় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ রোকেয়া সুলতানা জানান,এ সহিংসতায় প্রায় ১০৭১ জন আহত হয়ে ঢামেক হাসপাতালে এলে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় ‌এর মধ্যে ৪০ টি হেড ইনজুরি অপারেশন করা হয়েছে।এ সময় ২৭৮ জনকে ভর্তি দেয়া হয়েছে।ঢাকা মেডিকেলে ৩০ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন এবং ৬০ জনকে ব্রডডেড ঘোষণা করা।