বাকৃবি উদ্ভাবিত অ্যাপে গবাদিপশুর রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা নির্দেশনা
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৫, ১৬:১৮ | অনলাইন সংস্করণ
বাকৃবি সংবাদদাতা:

বাংলাদেশের কৃষি নির্ভর গ্রামীণ অর্থনীতিতে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালন লাখো পরিবারের জীবিকার প্রধান ভরসা। কিন্তু প্রাণিসম্পদ খাত এখনও রোগ শনাক্তকরণ, সঠিক চিকিৎসা, টিকা প্রদান এবং প্রয়োজনীয় তথ্যের ঘাটতিসহ নানা চ্যালেঞ্জে জর্জরিত। এর ফলে অনেক খামারি অপ্রয়োজনীয় ক্ষতির মুখে পড়েন।
এই প্রেক্ষাপটে ‘ডিজিটাল খামারি’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ প্রাণিসেবায় এনেছে প্রযুক্তির নতুন বিপ্লব। বাংলাভাষায় নির্মিত এই অ্যাপটি তৈরি করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সহিদুজ্জামান।
অ্যাপটি খামারিদের জন্য সহজবোধ্য ও চিত্রসহ তথ্য দিয়ে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির রোগ সম্পর্কে জানতে সহায়তা করে। এটি একটি সচেতনতামূলক ও শিক্ষামূলক অ্যাপ, যা খামারিদের প্রযুক্তির সহায়তায় নিজের খামারের সমস্যাগুলো দ্রুত চিহ্নিতকরণ ও প্রাথমিকভাবে সমাধানে সক্ষম করে তোলে।
অ্যাপটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সহজ ভাষা ও চিত্রভিত্তিক ফিচার। যেসব খামারি লেখাপড়ায় দুর্বল, তারাও ছবির মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করতে পারবেন। এতে গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস ও মুরগির সাধারণ ও জটিল রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। প্রতিটি রোগের সাধারণ চিকিৎসা পরামর্শ ও টিকা সংক্রান্ত তথ্যও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অ্যাপটির মাধ্যমে খামারিরা জানতে পারবেন, কোন রোগে কী লক্ষণ দেখা যায়, কোন ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে, টিকা দেওয়ার সঠিক সময় ও স্থানীয় ভেটেরিনারি চিকিৎসকের খোঁজ। এতে প্রাণির মৃত্যু হার কমবে, চিকিৎসার খরচ বাঁচবে এবং খামারির আর্থিক ক্ষতিও হ্রাস পাবে।
অ্যাপটির নির্মাতা অধ্যাপক সহিদুজ্জামান বলেন,"গ্রামাঞ্চলে পশু চিকিৎসকের অভাব প্রকট। অনেক সময় দূরবর্তী হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব হয় না। ডিজিটাল খামারি অ্যাপে স্থানীয় চিকিৎসকের নাম-ঠিকানাসহ যোগাযোগের তথ্যও রয়েছে, যা খামারিদের জন্য একটি বড় সুবিধা। খামারিরা এখন অ্যাপে জানতে পারেন, গরুর ওলান ফোলা কেন হয়, কৃমিজনিত রোগের লক্ষণ কী কিংবা ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ প্রতিরোধসহ বিভিন্ন রোগ হলে করণীয় কী।"
গুগল প্লে স্টোর হতে ‘Digital Khamari’ নামে অ্যাপটি বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যাবে। এরপর ইন্টারনেট ছাড়াই ব্যবহার করা যাবে। এতে আরও যুক্ত করা হয়েছে, সচেতনতামূলক কনটেন্ট, রোগভিত্তিক চিকিৎসা নির্দেশনা এবং খামার ব্যবস্থাপনায় সহায়ক তথ্য।
অ্যাপটির নির্মাতা অধ্যাপক ড. মো. সহিদুজ্জামান আরো জানান,"ভবিষ্যতে অ্যাপে লাইভ চ্যাট সাপোর্ট, ভিডিও টিউটোরিয়াল, আরও রোগভিত্তিক তথ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় এবং প্রতিদিনের খামার ব্যবস্থাপনার ক্যালেন্ডার ফিচার যুক্ত করারও পরিকল্পনা রয়েছে।"
তিনি বলেন,"ব্যবহারকারীদের মতামতের ভিত্তিতে অ্যাপটি নিয়মিত হালনাগাদ করা হচ্ছে যাতে এটি আরও ব্যবহারবান্ধব ও কার্যকর হয়।"
বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অর্থায়নে তৈরি ‘ডিজিটাল খামারি’ অ্যাপ গ্রামীণ প্রাণিসেবা খাতে প্রযুক্তির সফল উদাহরণ হয়ে উঠেছে। এটি শুধু তথ্য সরবরাহের মাধ্যম নয়, বরং খামারিদের আত্মনির্ভর করে তোলার এক কার্যকর হাতিয়ার। সরকারের সহায়তা ও বেসরকারি অংশীদারিত্বে এ ধরনের উদ্যোগ দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়লে খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান ও পুষ্টি উন্নয়নে বড় ধরনের অগ্রগতি ঘটবে। কারণ, সুস্থ প্রাণি একটি পরিবারের অর্থনৈতিক শক্তি যেমন, তেমনি একটি জাতির মূল্যবান সম্পদ।
আমার বার্তা/জয় মন্ডল/এমই