আবু সাঈদ হত্যার প্রতিবাদকারী শিক্ষক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার

প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৫, ১৩:১৬ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

আবু সাঈদের বিচার চেয়ে সরব থাকা সত্ত্বেও গণসংযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হককে পুলিশ আটক করায় উত্তাল রংপুরের বেগম রোকেয়া বিদ্যালয় (বেরোবি)। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাদের মাঝে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

১৯ জুন (বৃহস্পতিবার) বিকেল সাড়ে ৩ টায় ১০ মাস আগে ছাত্র-জনতার চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের সময় হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়া ছমেস উদ্দিন (৬৫) হত্যা মামলায় শিক্ষক মাহমুদুল হককে তার নিজ বাসগৃহ থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এর আগে ১১, ১৭ এবং ১৮ জুলাই ২০২৪, শিক্ষক মাহমুদুল হক কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে এবং আবু সাঈদের হত্যার বিচার চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ৩টি পোস্ট করেন। ১১ জুলাই তিনি লিখেন, মহামান্য হাইকোর্টের আংশিক রায় প্রকাশিত হয়েছে। এই রায়ে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী কোটা সংস্কার করার সুযোগ আছে। কারণ রায়ে বলা হয়েছে:

ক. সরকার কোটা কমাতে বা বাড়াতে পারে।

খ. কোটায় নির্ধারিত পদ পাওয়া না গেলে মেধাক্রম থেকে শুন্যপদ পূরণ করা যাবে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দেখে যেটা মনে হয়েছে তারা যৌক্তিক কোটা রাখার পক্ষে বা কোটা সংস্কারের পক্ষে। আর কোটা পাওয়া না গেলে মেধাক্রম থেকে শুন্যপদ পূরণ করার দাবি করছে। সুতরাং সরকার যদি চায় শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়ন করতে পারে উক্ত রায় অনুসারেই। আমার মনে হয় সরকার সেটা করবে। কিন্তু আপিল বিভাগ যেহেতু মহামান্য হাইকোর্টের উপর এক মাসের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন সে পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা করতে হবে। স্থিতাবস্থা অর্থ হচ্ছে যে আবস্থায় বিষয়টি আছে সেভাবেই থাকবে। এ অবস্থায় কোন পক্ষেই সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না।

১৭ জুলাই ২০২৪,তিনি লিখেন, পুলিশ হত্যা করেছে সাঈদকে সন্ত্রাসীদের থেকেও ঘৃণ্যভাবে!

পুলিশ গুলি করলো আমার শিক্ষার্থীকে তার ক্যাম্পাসের মাটিতে দাঁড়িয়ে। একেবারে প্রবেশদ্বার ক্যাম্পাসের ভিতর থেকে। পুলিশ এ সাহস কোথা থেকে পেলো? পুলিশ কি ক্যাম্পাসে প্রবেশের অনুমতি দেখাতে পারবে? অনুমতি কে দিলো? প্রবেশের অনুমতি পেলেই কি শিক্ষার্থীকে গুলি করতে পারে? সাঈদ তো বাইরে থেকে যেতে চেয়েছিল নিজের ক্যাম্পাসে, তার নীড়ে। নিশ্চয় পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ করতে নয়। সে তো বহিরাগত নয়, ক্যাম্পাসটা সাঈদের, পুলিশ বহিরাগত। পুলিশ এতো কাছ থেকে মাত্র কয়েক গজ দূর থেকে টার্গেট করে কীভাবে গুলি চালালো? একটি গুলি নয়, কয়েকটি পরপর। দাঁড়িয়ে আছে সাঈদ আর গুলি চলছে। পুলিশ নির্বিচার গুলি করলো, এটা তো নির্বিচার হত্যাকাণ্ড। পুলিশ হত্যা করেছে সাঈদকে সন্ত্রাসীদের থেকেও ঘৃণ্যভাবে। কেননা, সাঈদের দুই হাত উঠানো তো শান্তির বার্তা, এভাবে হাত উঠালে সন্ত্রাসীও গুলি বন্ধ করে, অস্ত্র নিচে নামিয়ে নেয়। এটা মেনে নেওয়া যায় না। পুলিশসহ যারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।

আমি পরাহত, আমি অনুতপ্ত এজন্য যে নিজ হাত দিয়ে ওই বন্দুকের নল চেপে ধরতে পারিনি কারণ আমি ঢাকা থেকে পথিমধ্যে ছিলাম। ক্ষমা করো আমাকে ।

১৮ জুলাই ২০২৪, তিনি আবু সাঈদ হত্যা বিচার চেয়ে লিখেন,পুলিশের তদন্ত মানি না, বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই।কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যাকান্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারকে (প্রশাসন) প্রধান করে পাঁচ সদস্যের এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমি সাঈদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে এই তদন্ত কমিটি প্রত্যাখান করছি। কারণ পুলিশের অপরাধের তদন্ত করবে পুলিশ এটা সাঈদের রক্তের সঙ্গেও প্রহসন। সাঈদকে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের ভিডিও দেখলেই তা পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যায়। বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উন্মোচন করে পুলিশ সদস্যদের সবোর্চ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশ নিজের তদন্ত নিজেই করবে-এটা হতে পারে না।

এ বিষয়ে ২৪ এর ছাত্র আন্দোলনে আবু সাঈদের সহযোদ্ধা শাহরিয়ার সোহাগ বলেন,

আমার শিক্ষক অর্থাৎ মোহা. মাহমুদুল হক বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সদস্য, দৈনিক ডেইলি স্টারের একজন প্রবীণ সাংবাদিক, ইউএনবি'র সাবেক সাব-এডিটর এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অন্যতম মেধাবী শিক্ষার্থী।

তিনি বলেন,এক প্রহসনমূলক ও হয়রানিমূলক মামলায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আজ বেলা ৩:৩০ঘটিকায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অতঃপর, কাল বিলম্ব না করে তাকে সরাসরি আদালতে নেওয়া হয় এবং সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন,এ দিয়ে ৫ই আগস্টের পর ৩য় বারের মতো জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন মামলায় তাকে এজাহারভুক্ত করা হলো যেগুলোর সাথে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আবু সাঈদ ভাই শহীদ হওয়ার পর তিনিই প্রথম শিক্ষক হিসেবে তিনি এই পুলিশী হত্যাকান্ডের বিচার চান। এছাড়াও পুলিশের দ্বারা সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দায়িত্ব পুলিশকে না দেওয়ার দাবি তোলেন। এছাড়াও তিনি, ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন। তার দৃষ্টান্ত হলো সাবেক উপাচার্য ড. কলিমুল্লার দূর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ততকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে ওঠা আন্দোলনের নেতৃত্বস্থানে তিনি ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দীপ্ত কন্ঠে প্রতিবাদ করা ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পুলিশী গণহত্যার বিচার চাওয়াই তার কাল হয়ে দাড়িয়েছে।

শিক্ষার্থী রিনা মুর্মু ফেসবুকে লিখেন,প্রহসনের মামলা,উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলায় গ্রেফতার মাহমুদুল স্যারকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. মো ফেরদৌস রহমান বলেন, এ মামলা আসলে ষড়যন্ত্রমূলক। মামলার বিষয়ে কেউ যেন বুঝতে না পারে, সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের তাজহাট থানায় মামলা না করে হাজির হাট থানায় মামলা করা হয়েছে এবং সুপরিকল্পিতভাবে বন্ধের দিন দেখে তাকে আটক করা হয়ছে ।


আমার বার্তা/জেএইচ