নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে জাঁকজমকভাবে উৎযাপিত হচ্ছে নজরুল জয়ন্তী

প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৫, ১৩:৫০ | অনলাইন সংস্করণ

  নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

‘মোরা বন্ধন-হীন জন্ম-স্বাধীন, চিত্ত মুক্ত শতদল’—এই শ্লোগানকে ধারণ করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে জাঁকজমকপূর্ণ দুই দিনব্যাপী নজরুল জয়ন্তী। 

রবিবার (২৫ মে) প্রথম দিনের আয়োজন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয়।

অনুষ্ঠানের সূচনায় সকাল ১১টায় নজরুল ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস. এম. এ. ফায়েজ এবং অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। পরে ‘গাহি সাম্যের গান’ মঞ্চে শুরু হয় মূল আলোচনা পর্ব। শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করেন নজরুল সংগীত ‘অঞ্জলি লহ মোর…’।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস. এম. এ. ফায়েজ এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী,বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ডা. মো. মাহবুবুর রহমান এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মো. জেহাদ উদ্দীন। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক রায়হানা আক্তার এবং ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক মো. জিল্লাল হোসাইন। উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন অনুষদের ডিন, শিক্ষক ও কর্মকর্তারা।

বক্তব্যে অধ্যাপক ড. এস. এম. এ. ফায়েজ বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কঠিন প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও যে অসাধারণ সাহিত্যকর্ম উপহার দিয়েছেন, তা বর্ণনা করে শেষ করা যায় না। তাঁর কবিতার প্রতিটি পঙক্তিতে মেলে তাঁর বিদ্রোহী চেতনাকে—যেমন: ‘মোরা বন্ধনহীন জন্মস্বাধীন, চিত্ত মুক্ত শতদল’। নজরুল ছিলেন দ্রোহের কবি, সংগ্রামের কবি, সাম্যের কবি, প্রেমের কবি—বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। তাঁর সেই সংগ্রামী আদর্শকে ধারণ করেই আমাদের তরুণ প্রজন্ম জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে আত্মদানের বিনিময়ে এক নতুন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছে। অন্যদিকে, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অর্থ সংকটে ভুগছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছে অর্থের দাবি জানায়, ইউজিসি সেই দাবি তুলে ধরে সরকারের সামনে। অথচ সরকার বলছে, দেশের সমস্ত অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। তবুও আমরা চেষ্টা করছি—শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে।

সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জাতীয় কবিকে ত্রিশালের সন্তান হিসেবে আমরা গর্বের সঙ্গে বিবেচনা করি। তাঁর স্মৃতিচিহ্ন ত্রিশালের নানা স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে। ময়মনসিংহ তথা ত্রিশাল যেন এক নজরুলময় অঞ্চল। তিনি ‘নজরুল নিকেতন’ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং নজরুলের চেতনা ও দর্শন নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার ওপর জোর দেন।

আলোচনা সভা শেষে অতিথিরা নজরুল জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত বইমেলার উদ্বোধন করেন এবং উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন। দুপুর ২টা ৩০ মিনিট থেকে প্রশাসনিক ভবনের তৃতীয় তলায় অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক নজরুল বক্তৃতামালা-২০২৫। এতে বাংলাদেশ ও ভারতের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক ও নজরুল অনুরাগীরা মোট পাঁচটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার সমাপ্তি ঘটে সন্ধ্যা ৭টায় ‘গাহি সাম্যের গান’ মঞ্চে অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক আয়োজনের মাধ্যমে। এতে আবৃত্তি, নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানটি নজরুল চেতনায় প্রজন্ম গঠনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এক গৌরবময় আয়োজন হিসেবে পরিগণিত হয়।


আমার বার্তা/সামী আহম্মেদ পাভেল: জেএইচ